চট্টগ্রাম: লক খুলে একটি সিএনজি অটোরিশকা চুরি করতে সময় লাগে মাত্র ৩০ সেকেন্ড। তাও আবার দিনে দুপুরে।
মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নগরের ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ এলাকা থেকে চোরচক্রের সক্রিয় মো. বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার মো. বাবুলের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে নগরের চান্দগাঁও থানার বাহির সিগন্যাল বেপারী পাড়া ইসমত আলী সেরাং বাড়ীর পাশে করিম সওদাগরের খালি প্লট থেকে চোরাইকৃত একটি সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার মো. বাবুল (৪৫), নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার সোনাদিয়া চৌরাস্তার বাজারের পশ্চিমে মহিউদ্দিনের বাড়ীর মৃত আমিনুল হকের ছেলে।
পুলিশ জানিয়েছেন, নগরের আগ্রাবাদ মুহুরী পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. গোলাম কিবরিয়া। বয়সের ভারে কোন কাজ করতে না পারায় ব্যাংক লোনে কিস্তিতে একটি সিএনজি অটোরিকশা ক্রয় করে আমির হোসেন নামে একজন সিএনজি চালককে ভাড়ায় চালানোর জন্য দেন। গত ২৬ মার্চ দুপুর একটার দিকে নগরের কোতোয়ালী থানার মোমিন রোড শাহ আনিস (র) জামে মসজিদের সামনে পাকা রাস্তার উপর সিএনজিটি রেখে নামাজে যান চালক। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখেন তার সিএনজিটি নেই। পরে তিনি আশেপাশের সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও সিএনজির কোনো হদিস না পেয়ে মালিক মো. গোলাম কিবরিয়াকে মোবাইল ফোনে জানান। এক পর্যায়ে চালক আমির হোসেনের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে অজ্ঞাত ফোন নাম্বার হতে কল আসে, সিএনজির মালিকের মোবাইল নাম্বার চাওয়া হয়। পরে মালিকের ব্যক্তিগত মোবাইল কল করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। অন্যথায় গাড়ীর পার্টস খুলে বিক্রয়ের এবং কর্ণফুলী নদীতে ডুবিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। গত ৩ এপ্রিল নগরের কোতোয়ালী অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন গোলাম কিবরিয়া।
পুলিশ আরও জানান, চুরির পর গ্যারেজে দালাল বা সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করা হয় গাড়ি। তারা আবার দোকানে দোকানে পার্টস আলাদা করে বিক্রি করেন। শুধু তাই নয়, ইঞ্জিন আর রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেও বিক্রি করা হয় চোরাই গাড়ি।
কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, সিএনজি অটোরিকশা চুরির মামলার তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তি ও ম্যানুয়াল সোর্সিং এর মাধ্যমে আসামি বাবুলকে শনাক্ত করা হয়। নগরের বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শেষে নগরের ডবলমুরিং থানার মনসুরাবাদ এলাকা হতে বাবুলকেকে গ্রেফতার করা হয়। বাবুলের স্বীকারোক্তি ও তার দেখানো মোতাবেক নগরের বাহির সিগন্যাল বেপারী পাড়া ইসমত আলী সেরাং বাড়ীর পাশে করিম সওদাগরের খালি প্লট থেকে গোলাম কিবরিয়া চুরি হওয়ার সিএনজি অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, চোরাই চক্রটির সদস্যরা সকলেই সিএনজি অটোরিকশা চালক এবং মেক্যানিক। যার কারণে চক্রটি দ্রুততার সঙ্গে চাবি ছাড়া গাড়ী স্টার্ট দিতে পারদর্শী। তাদের একজন সদস্য আগে থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে সিএনজি অটোরিকশা পাহারা দেয় এবং অন্যান্য সদস্যদের খবর দেয়। গ্রেফতার বাবুলসহ অন্যান্য আসামিরা একটি সিএনজি নিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। সংবাদ পেলে তাৎক্ষণিক ওই জায়গায় পৌঁছে রাস্তার পাশে পার্কিং করা সিএনজি মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে স্টার্ট দিয়ে নিয়ে চলে যায়।
অভিযানে থাকা কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোমিনুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতার বাবুলদের সিএনজি অটোরিকশা চোর চক্রটি সিএনজি অটোরিকশা চুরি করার পর মালিক বা চালকের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে চাঁদা দাবি। মালিকের নিকট কখনও ১ লাখ, কখনও দেড় লাখ, আবার কখনও আরও বেশী টাকা চাঁদা হিসেবে দাবি করে থাকে। চাঁদার টাকা পেলে গাড়ীটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে রেখে চলে যায়। গ্রেফতার বাবুলের চক্রটি গত তিন মাসে অন্তত ৫০টি অধিক সিএনজি অটোরিকশা চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করে। গ্রেফতার বাবুলের আগেও একটি চুরির মামলা রয়েছে। চোরাই চক্রের বাকী সদস্যদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২৩
এমআই/এমআর/টিসি