চট্টগ্রাম: পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চার ছাত্রলীগ কর্মীকে নকল করতে না দেওয়ায় তোপের মুখে পড়েন এক শিক্ষক। ঘটনার পর থেকে ছাত্রলীগ নেতারা নানানভাবে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষক।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়াও নগরের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
সর্বশেষ ৩ এপ্রিল ইনস্টিটিউট থেকে বাসায় ফেরার পথে উত্যক্তের শিকার হন তিনি। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকের নাম প্রকাশ শিকদার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম শাহাদাত হোসেন ওমর। তিনি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস)।
ভুক্তভোগী শিক্ষক প্রকাশ শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউটের চতুর্থ পর্বের ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালে ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) শাহদাত হোসেন ও সাদমান সাকিব গিয়ে হলে কারো কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে চান। তখন চার ছাত্র দাঁড়িয়ে নিজেদের পছন্দের আসনে পাশাপাশি বসতে চাওয়ার কথা বললে তিনি ইচ্ছেমত বসতে বলেন।
প্রকাশ শিকদার বলেন, শাহাদাত আর সাদমান সাকিব চলে যাওয়ার পর আমি শিক্ষার্থীদের বলি, ‘আপনারা নিজ নিজ আসনে বসেন। ’তখন ওই চারজন আসন পরিবর্তন করে নিজেদের জন্য নির্ধারিত আসনে বসে। তাদের কাছে মোবাইল ছিল। তারা মূলত নকল করে লিখতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তাদের জন্য নির্ধারিত আসনে ফেরত পাঠানোয় সুবিধা করতে পারেনি। তাই এক ঘন্টা পর তাদের তিনজন উত্তরপত্র জমা দিয়ে হল থেকে বেরিয়ে যায়।
‘এই তিনজন হলো- মুহিতুল আজিম, মিফজাহুল আশরাফ ও মোশাররফ হোসেন। এর কিছুক্ষণ পর তারা ফোন করে শাহাদাতকে ডেকে এনেছে। শাহাদাত আরো দুজনসহ আমার কাছে এসে তাদের উত্তরপত্র ফেরত দিতে বলে। কিন্তু জমা দেওয়া উত্তরপত্র ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই জানালে তারা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। হত্যাসহ নানা হুমকি দেয়’।
এসময় কৌশলে ঘটনার কিছু অংশের ভিডিও ধারণ করে রাখেন শিক্ষক প্রকাশ শিকদার। এরপর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ঘটনাস্থলে এসে ওই তিন ছাত্রের উত্তরপত্র ফেরত দেন।
এই ঘটনায় পরদিন উপাধ্যক্ষ স্বপন নাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- মাইনুল হুদা সিরাজী ও জাবেদ ইকবাল। তদন্ত কমিটি ১৯ দিন পর অধ্যক্ষ বরাবর ৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদন জমা হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি প্রকাশ শিকদারের। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে যেভাবে বলা হয়েছে ঠিক সেভাবে দোষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে দোষী কারা বা তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কিছু জানাতে রাজী হননি।
ছাত্রলীগ নেতার হুমকির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঘটনার পরদিন অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান বরাবর একটি আবেদন করেন ওই শিক্ষক। একইদিন নগরের খুলশী থানায় হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই ডায়েরির পরও প্রকাশ শিকদারকে অনবরত হুমকি ও উত্যক্ত করায় ডায়েরির অভিযোগ তদন্তে আদালতের অনুমতি চায় পুলিশ। এর প্রেক্ষিতে সোমবার চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালত পুলিশকে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।
ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) শাহাদাত হোসেন ওমর বলেন, ওইদিন তিনি পরীক্ষার হলরুমে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলেছিলেন। কয়েকজন ছাত্র এর প্রতিবাদ করায় তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে উত্তরপত্র জমা দিয়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। পরে আমি তাদের সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বাজে কথা বলার কারণ জানতে চেয়েছিলাম। তখন ওই শিক্ষক আমার সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পরবর্তীতে আমার সঙ্গে থাকা দুজন তাঁকে ওই ছাত্রদের উত্তরপত্র ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি থানায় একটা অভিযোগ করেছিলেন। ওসিকে বলেছি, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা সবাইকে নিষেধ করেছি যেন ওনার সঙ্গে আর কেউ কোনো কথা না বলেন। তাছাড়া রোজার মধ্যে ওনার সঙ্গে আমার দেখাও হয়নি। আমি কেমনে ওনাকে বুলিং করবো?’
তদন্তাধীন বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি খুলশি থানার উপ-পরিদর্শক মো. নুরুল আবছার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২৩
বিই/টিসি