চট্টগ্রাম: জুতা পায়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের অভিযোগে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানি মামলার আবেদন করেছেন মো.কামাল উদ্দীন নামের এক আইনজীবী।
সেই আবেদনে বাদী ৪ জনকে সাক্ষী করলেও মামলার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
গত ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমির আদালতে এ মামলার আবেদন করা হলেও এখনো এ বিষয়ে আদেশ দেননি আদালত। গত ৫ এপ্রিল মামলাটির শুনানি হয়েছে। ২৫ মে মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদী অ্যাডভোকেট মো.কামাল উদ্দীন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে মো.কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন এই মামলার ২ নম্বর সাক্ষী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন কবির।
অ্যাডভোকেট কামাল দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সহ-সম্পাদক। তিনি সাতকানিয়ার গারাংগিয়া গ্রামের সুপারপাড়ার ফজল করিমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের জন্য আগামী ২২ মে দিন ধার্য রয়েছে। সেই মামলায় গত ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছিলেন তিনি।
অ্যাডভোকেট কামাল মামলার আর্জিতে বলেছেন, সাতকানিয়া উপজেলা কার্যালয়ে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে গত ৭ মার্চ সকাল ৯টায় জুতা পায়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ফুল দিয়েছেন এম এ মোতালেব। জুতা পায়ে ফুল দিয়ে এম এ মোতালেব বঙ্গবন্ধুকে অশ্রদ্ধা, অসম্মান ও অমর্যাদা করেছেন।
মামলার দুই নম্বর সাক্ষী সাতকানিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন কবির বাংলানিউজকে বলেন, মামলার বাদী কামাল উদ্দীনের সঙ্গে গত সাত-আট বছর ধরে দেখা হয়নি। আমি রাজনীতি করি, সে হিসেবে আমাকে চিনতে পারে। একসঙ্গে বসে চা খাইনি। আড্ডা ও রাজনৈতিক আলোচনা করিনি। প্রয়াত এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও আমাকে জড়িয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলাম। পিবিআই সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করে কামালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের মার্চ থেকে কামাল আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ১৫টির অধিক মামলা করেছে। সেখানে কামালের বাড়ি থেকে ইট চুরি থেকে নির্বাচন অফিসে তাকে মারধর করার মতো অভিযোগ- কোনটাই বাদ যায়নি। ১৫ বছর ধরে আমার বড় ভাই প্যারালাইজড হয়ে বাড়িতে শয্যাশায়ী, তাঁকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। আমার আরও দুই ভাই বিদেশে থাকে, তাদেরকেও বিভিন্ন মামলায় আসামি করেছে। অনেক মামলায় আমার জামিন নিতে হয়েছে। কামালের সঙ্গে আমার কোনও ধরনের যোগাযোগ নেই।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, মোতালেব সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সেখানে আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে। কামাল এতদিন আমাকে আসামি করেছে, এখন আবার সাক্ষী কেন করা হলো? সেটাও আমার অজ্ঞাতসারে। আমার পেছনে কেন লেগে আছে, বুঝতে পারছি না। কামাল সাহেবের সিনিয়র, জুনিয়র কোনও প্রতিনিধি যোগাযোগও করেনি। আমি যে কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সেই কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে কিভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবো? যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, ওই সময় আমি ঢাকায় ছিলাম।
মামলার আবেদনে তিন নম্বর সাক্ষী লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ.কে.এম আসিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত ২৭ মার্চ মামলার আবেদনের বিষয়ে আমি অবগত নই। মামলা সম্পর্কেও কিছুই জানি না। বাদী আমার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি।
চার নম্বর সাক্ষী সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মন্নান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মামলার আবেদনে আমাকে চার নম্বর সাক্ষী করার বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার সঙ্গে কথা না বলেই এমন কাজ করেছে।
মামলার পাঁচ নম্বর সাক্ষী নারগিস আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিস্ময় প্রকাশ করেন। তবে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
বাদী অ্যাডভোকেট মো.কামাল উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, মামলার আবেদনে যাদের সাক্ষী করা হয়েছে, তারা জেনেও এখন না জানার ভান করছে। দুই নম্বর সাক্ষীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আক্রোশে মোহাম্মদ হোসেন মিথ্যা বলছে, মন্নানরাও ভয় পাচ্ছে।
আইনজীবীরা জানান, সাধারণত নালিশি মামলায় যাদেরকে সাক্ষী রাখা হয় তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। বাদীর অভিযোগে যাদেরকে সাক্ষী রাখা হয়েছে তারা কেউ কিছু না জানলে নালিশি মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মো.সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মামলা হওয়ার কথা সাক্ষীরা জানেন না- এই ধরনের মামলায় জালিয়াতি থাকে, এটা নিশ্চিত। এরকম মামলায় আদালত ও তদন্তকারী সংস্থার সময় নষ্ট হয়। জালিয়াতি করে দায়ের করা মামলায় বাদীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৩
এমআই/টিসি