চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: বিতর্কিত প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করার প্রসঙ্গে বাংলানিউজে গত ১৫ মার্চ ‘চবির পালি বিভাগ: বিতর্কিত প্রার্থীকেই সবার আগে নিয়োগের সুপারিশ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় । এ সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগে বিতর্কিত প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশের বিষয়টি উল্লেখ করে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট ও চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ রাসেল। একই বিভাগের শিক্ষক নিয়োগপ্রার্থী সজীব সিংহ ও বোধি মিত্র শ্রামনের পক্ষে এ নোটিশ দেওয়া হয়।
নোটিশে পালি বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে যথাযথ প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দিলে পরবর্তীতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
গত ৩০ মার্চ আইনি নোটিশটি পাঠানো হলেও সম্প্রতি বিষয়টি সামনে আসে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাসেল।
নোটিশে বাংলানিউজে প্রকাশিত সংবাদটি হুবহু উল্লেখ করা হয়। গত ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চবির পালি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় নিয়ম ভঙ্গ করে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয় সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়াকে। শুধু তাই নয়, পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা, নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদনের শর্তাবলী পুরণ না করাসহ সার্বিক বিষয়ে পালি বিভাগের সভাপতি ও ভাইভা বোর্ডের সদস্য শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপন এ প্রার্থীর নিয়োগের বিষয়ে দ্বিমত পোষন করেন। তা সত্ত্বেও চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের উপস্থিতিতে নিয়োগ বোর্ড বিতর্কিত প্রার্থী অভি বড়ুয়াকেই নিয়োগের জন্য সর্বপ্রথম সুপারিশ করে।
এছাড়া দুই পদের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও নিয়োগের জন্য ৪ জনকে সুপারিশ করা হয় নিয়োগ বোর্ড থেকে। এর মধ্যে সুপারিশের তালিকায় এক নম্বরেই রাখা হয় সরকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়ার নাম। যদিও বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত দুই শিক্ষকের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই এখন।
নোটিশে আরও বলা হয়, শিক্ষক নিয়োগে দূর্নীতি ও অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেশের প্রচলিত আইনবিরোধী এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য চরম অশনি সংকেত। যেখানে উচ্চতর যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীরাই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার দাবীদার, সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম যোগ্য ও নিয়োগের শর্তাবলী পূরণে সক্ষমতা নেই এমন প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানকে শেষ করে দেওয়ার সুদুর প্রসারী কৌশল কোনোভাবে কাম্য নয়। এ ধরনের দুর্নীতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি সনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে দেওয়ার অপকৌশল।
নোটিশে আইনজীবী বলেন, আমার মক্কেলরা চবির পালি বিভাগের প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য যোগ্যতার শর্তাবলী পুরন করে মৌখিক পরীক্ষায় ও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তা স্বত্ত্বেও কয়েকজন অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার অপচেষ্টা করায় এ লিগ্যাল নোটিশের মাধ্যমে পালি বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে যথাযথ প্রার্থীদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে এসব প্রার্থীরা। অন্যথায় তারা আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
আইনজীবী মোহাম্মদ রাসেল আরও বলেন, আমরা গণমাধ্যমের সুবাদে জানতে পেরেছি যে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে চবির পালি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমার মক্কেলদের যাবতীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে এমন একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যার কিনা আবেদনের যোগ্যতাও ছিলো না। এটাও জানতে পেরেছি যে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি বর্তমান একজন সহকারী প্রক্টরের স্ত্রী। তিনিই নাকি প্রভাব খাটিয়ে তার স্ত্রীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন। তাই আমরা লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি। আমরা চাই অযোগ্যদের নিয়োগ বাতিল করে যোগ্যদের যেন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নোটিশ পেয়েছি। সবকিছু দেখেশুনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
এমএ/পিডি/টিসি