চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করতে চলছে জমজমাট প্রচার প্রচারণা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদকে সাথে নিয়ে দিন-রাত নগর ও বোয়ালখালী চষে বেড়াচ্ছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন ও তাঁর অনুসারীরা।
তবে নগর আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাকর্মীদের এখনো প্রচারণায় দেখা যায়নি। এ নিয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে।
উপ-নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে পাড়া-মহল্লা। অন্য চার প্রার্থীর প্রচারণা কিছুটা ঢিমেতালে চললেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ গণসংযোগ করছেন জোরেশোরে। আর এই প্রচারণার মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে প্রতিদিন গণসংযোগ ও পথসভায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। মিনি ট্রাকে বোয়ালখালীর প্রত্যন্ত এলাকায় নোমানকে পাশে রেখে নৌকার জন্য ভোট চাইছেন তিনি। উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন, সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরছেন, বিরোধীদের সমালোচনা করছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আট মাস আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এই উপনির্বাচনে চেয়ার প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ (মোমবাতি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এস এম ফরিদ উদ্দীন (চেয়ার), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির কামাল পাশা (আম) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোহাম্মদ রমজান আলী (একতারা)।
আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমি দলের মনোনীত প্রার্থী নোমান ভাইকে জিতিয়ে আনার জন্য আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাকিটা ভোটাররা বিবেচনা করবেন। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও তারা মাঠে আছে অরাজকতার উদ্দেশ্যে। জ্বালাও পোড়াও করে মানুষ হত্যা এবং সম্পদ ধ্বংস করার অভিজ্ঞতা তাদের রয়েছে। তাই আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়লাভের প্রত্যাশার পাশাপাশি অরাজকতা ও নাশকতার বিরুদ্ধেও মাঠে আছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের সাথে কখনো প্রতারণা করেনি। কারণ জনগণ বুঝে, আওয়ামী লীগ ছাড়া তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের কোনও বিকল্প নেই। তাই এবারও নৌকার প্রার্থীর বিজয় জনগণ সুনিশ্চিত করবে।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, আমার সঙ্গে দলের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। ভোটারদের কাছে গিয়ে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন তুলে ধরছি। কেউ প্রচার-প্রচারণা, কেউ গণসংযোগ ও আবার কেউ লিফলেট বিতরণ করছে। দলের চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরাও সময় দিয়ে আমার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। সবসময় মানুষের পাশে ছিলাম, থাকবো।
বোয়ালখালী ও পাঁচলাইশ-চান্দগাঁও নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হলে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপ-নির্বাচনে মোছলেম উদ্দিন আহমদ সংসদ সদস্য হন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হলে পুনরায় আসনটি শূন্য হয়।
১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা এম কফিল উদ্দিন। ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীকে মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) মঈন উদ্দীন খান বাদল সংসদ সদস্য হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। শনিবার তৃতীয় দিনে মতো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। সর্বমোট ৪ হাজার ৬৫৫ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এই আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৪৩ ও নারী ২ লাখ ৫৪ হাজার ১০৯ জন। ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৩
এমআই/টিসি