চট্টগ্রাম: আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলার ১১৪তম আসরে নগরের লালদীঘি মাঠে বাঁশ ও বালি দিয়ে তৈরি হয়ে গেছে লড়াই মঞ্চ। মঙলবার (২৫ এপ্রিল) হবে বলী খেলা।
করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা ও মেলা বন্ধ ছিল।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ও শরীর গঠনে উৎসাহিত করতে ১৯০৯ সালে নগরীর বক্সিরহাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার সওদাগর লালদীঘি মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। যা এখন জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিত। এই বলী খেলায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, তিন পার্বত্য জেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নানা বয়সী বলীরা অংশ নেন।
লালদীঘি মাঠকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় মেলা বসে। ঈদের ছুটির মধ্যেই মেলা উপলক্ষে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ,নরসিংদী, খুলনা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছেন তাদের পণ্য নিয়ে। উঠে যাওয়া রঙ আবারও নতুন করে লাগাচ্ছেন মাটির সামগ্রীতে। নগরে ফিরতে শুরু করা মানুষের অংশগ্রহণে জমজমাট হয়ে উঠবে মেলা প্রাঙ্গণ- এমনটাই আশা করছেন তারা।
মাটির তৈজসপত্র, ঝাড়ু, হাতপাখা, শীতলপাটি, দা-খুন্তি, প্লাস্টিকের সামগ্রী-ফুল, মণ্ডা-মিঠাই, গৃহসজ্জার সামগ্রী, গাছের চারা, তামা-কাঁসা-পিতলের সামগ্রী, কাঠের আসবাবপত্র, বেতের আসবাব, বাদ্যযন্ত্র, দোলনা, মাছ ধরার জাল, মোড়া, পিঁড়ি, জলচৌকিসহ কী নেই এই মেলায়। নগরের অধিবাসীরা সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন এই মেলার জন্য। কারণ এখানেই মিলে গৃহস্থালীর সব জিনিসপত্র।
ঢাকা থেকে মেলায় মাটির তৈজসপত্র নিয়ে এসেছেন ঢাকার ব্যবসায়ী মো. দীপু। তিনি বলেন, দুইদিন আগেই মেলায় জিনিসপত্র নিয়ে এসেছি। ট্রাক ভাড়া বেশি দিতে হয়েছে। মেলায় মানুষ বাড়লে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
নারায়ণগঞ্জ থেকে মণ্ডা-মিঠাই নিয়ে জব্বারের বলীখেলার মেলায় এসেছেন কনক দাস। তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের সবাই এই ব্যবসায় জড়িত। প্রতিবছর এখানে চলে আসি। বাপ-দাদারাও এসেছেন। একটা জায়গা পেয়েছি। পসরা সাজাচ্ছি।
ঝাড়ু নিয়ে খাগড়াছড়ি থেকে এসেছেন সাদেকুল। তিন শ জোড়া ঝাড়ু এনেছেন তিনি। মেলায় ঝাড়ু বেশি বিক্রি হয়। এছাড়া আছে হাতপাখার কদর। চন্দনাইশ থেকে বেত ও তালপাতার পাখা এনেছেন জহির মিয়া। গরমের এই সময়ে হাতপাখা কিনে কেউ ঠকবে না বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীদের চোখে এখন ভালো বেচাকেনার স্বপ্ন।
বৈশাখী মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এরই মধ্যে বলী খেলার ট্রফি, জার্সি ও থিম সংগীতের মোড়ক উন্মোচন করেছেন তিনি। বুধবার (২৬ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হবে চাটগাঁইয়া ঈদ উৎসব।
আবদুল জব্বারের নাতি ও বৈশাখী মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে বাপ-দাদার মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় এই মেলার আয়োজন করে যাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসন সার্বিক সহায়তা করছে। বলীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দোকানিরা আসছেন মেলায়। এই বলীখেলা ও মেলা চট্টগ্রামবাসীর ঐতিহ্য।
জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি চসিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, এ বছর দুই শতাধিক কুস্তিগির প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া চাটগাঁইয়া উৎসবে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। এ উপলক্ষে শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৩
এমআর/এসি/টিসি