চট্টগ্রাম: স্বাধীনতার ভিত্তিভূমি রচনা করতে গিয়ে বহু শতাব্দীব্যাপী যেসব বীর বিপ্লবী হাসিমুখে মৃত্যুকে জয় করেছেন, দেশমাতৃকার সেই অমৃত সন্তানদের একজন চট্টগ্রামের বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। সকল আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি প্রেরণার উৎস।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহিদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর ১১৩তম জন্মদিনের সভায় বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।
শুক্রবার (০৫ মে) পটিয়ার বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্ট এ উপলক্ষ্যে স্মরণসভা আয়োজন করে।
প্রীতিলতা ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পঙ্কজ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডাটা এক্সচেঞ্জ’র প্রধান নির্বাহী ইমতিয়াজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম।
সভায় বক্তারা বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে বীরকন্যা প্রীতিলতাসহ সকল বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, ঔপনিবেশিককালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বাঙালির বহুমাত্রিক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় এ ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের মধ্য দিয়ে যে নতুন বিপ্লবের সূচনা হয় সেটি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উজ্জ্বল অধ্যায়।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পঙ্কজ চক্রবর্তী বলেন, বীরকন্যা প্রীতিলতা যুগে যুগে সকল আন্দোলনের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।
সভায় বক্তব্য দেন বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্টের ট্রাস্টি বিজয় ঘোষ, রঘুনাথ চক্রবর্তী, কৃষ্ণা চক্রবর্তী, আজীবন সদস্য প্রবোধ রায় চন্দন, রূপক চক্রবর্তী, জয়নাল আবেদীন, অধ্যাপক ভগীরথ দাশ, সাংবাদিক সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন প্রত্যয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমীর আবদুল্লাহ ফারুক রবি, সংগীত শিক্ষক বরুণ পালিত, নৃত্য শিক্ষক হৈমন্তী দে, চারুকলা শিক্ষক আকরাম হোসেন, আজীবন সদস্য সুকান্ত নাথ, প্রীতিলতা শিশু কাননের সহকারী প্রধান শিক্ষক চন্দন দাশ, সুলতানা রাজিয়া, রূপশ্রী চক্রবর্তী, সুমি নাথ, বিপ্লবী দলের সদস্য রাহুল দে, প্রান্ত দে, সেবাক মজুমদার, আকাশ নাথ, প্রমা দে, বিউটি দে প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বীরকন্যা প্রীতিলতা শিশু কাননের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। এ উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা, সংগীত, নৃত্য, কবিতা পাঠসহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর জন্মদিনে নগরের পাহাড়তলীতে অবস্থিত ইউরোপীয়ান ক্লাবের সামনে প্রীতিলতা ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে পথসভা ও আলোচনা সভা আয়োজন করে বিভিন্ন সংগঠন। বক্তারা ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মাহুতি দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার দাবি জানান।
১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে প্রীতিলতার জন্ম। বাবার নাম জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল অফিসের প্রধান কেরানি। প্রীতিলতার মা প্রতিভা দেবী ছিলেন গৃহিণী। মেধাবী ছাত্রী প্রীতিলতার স্কুলজীবন থেকে গভীর আগ্রহ ছিল দেশ-বিদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে বীরত্বব্যঞ্জক গল্প শোনা, দেশাত্মবোধক ঘটনাপঞ্জি নিজের সংগ্রহে রাখা। ডা. খাস্তগীর ইংলিশ হাইস্কুলে পড়ার সময় তিনি বিপ্লবী ক্ষুদিরামের ফাঁসির কথা জানতে পারেন। চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের নায়ক মাস্টারদা সূর্যসেনের সংগ্রামী জীবনের অনেক ঘটনা তার কিশোর মনে রেখাপাত করেছিল। ১৯৩০ সালে ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সম্মিলিত মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেন তিনি। ১৯৩২ সালে ডিসটিংশনসহ বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রামের নন্দনকানন অপর্ণাচরণ উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২৩
এসি/টিসি