চট্টগ্রাম: এক যুবককে কিল ঘুষি মারছেন চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম। এরমধ্যে খবর দেওয়ায় পুলিশ এসে হাজির।
রোববার (২১ মে) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে এমন স্বীকারোক্তি দিয়ে আদালতে মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন মামলার বাদী অপু প্রধান।
অপু প্রধানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, মামলার বাদী অপু প্রধান আমার চেম্বারে এসে আমাকে বলেন, যে তাকে বাদী করে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে আকবরশাহ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। যে মামলাটি সে করতে ইচ্ছুক ছিলে না এবং বিবাদীর বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। যেহেতু মামলাটি রুজু হয়ে গেছে, তাই তিনি মামলাটি প্রত্যাহার করতে চান। তার অনুমতিক্রমে আমি তাকে আইনগতভাবে মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য যাবতীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে আজ মাননীয় আদালতে আবেদন করি।
তিনি আরও বলেন, মামলা প্রত্যাহারের জন্য রোববার (আজ) আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
নিজেকে হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দাবি করে আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় অপু প্রধান দাবি করেন, বিভিন্ন ধরনের ক্রোকারিজ সামগ্রী নিয়ে ভ্যান গাড়ীতে করে ফেরী করে ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। গত ১৭ মে তারিখের ২-৩ দিন পূর্ব থেকে নগরের আকবরশাহ থানার পূর্ব পিরোজশাহ এলাকার এইচ ব্লক মোড়ে লটারির মাধ্যমে ব্যবসা করছিল সে। লটারির মাধ্যমে ব্যবসা করায় এলাকার জনসাধারণের মধ্যে মারামারি ঝগড়াঝাটিসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়। তাই এলাকার জনগণ লটারির ব্যবসা বন্ধ করার জন্য বললেও তাদের কথা না শুনে লটারি ব্যবসা চালিয়ে যায় সে। স্থানীয়রা কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন । কাউন্সিলর লটারি ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বলেন। এলাকার সাধারণ মানুষ তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করার চেষ্টা করলে কাউন্সিলর স্থানীয়দের মারধর থেকে রক্ষা করতে তাকে ধরে চড় থাপ্পর ও বকাঝকা করেন। কাউন্সিলর জসিম তৎক্ষণাত পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য স্থানীয় আকবরশাহ থানায় ফোন করেন। পরে টহল পুলিশ আসলে কাউন্সিলর তাকে থানা নিয়ে একটি মুছলেকা নিয়ে ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু তাকে থানায় নিয়ে ১৭ মে বিকেল সোয়া পাঁচটার থেকে ১৮ মে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আটকে রাখে পুলিশ। পরে পুলিশ থানার তার মুছলেকা নিয়ে ব্যবসায়ীক জিনিসপত্র বুঝিয়ে দেন।
এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাকে কাগজপত্রগুলো পড়তে দেয় নি বলে অভিযোগ করেন ওই যুবক।
মামলার কথা জানতেন না স্বীকারোক্তি দিয়ে বাদী অপু প্রধান হলফনামা বলেন, ‘পরবর্তীতে সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল ফোনটি অন করলে কয়েকটি নাম্বার থেকে অপুর কাছে ফোন আসে এবং কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানায়। পরবর্তীতে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে বাদী দেখিয়ে কাউন্সিলর জহুরুল আলম সহ আরও অজ্ঞাতনামা ৫ থেকে ৬ কে আসামি করে আকবরশাহ থানার মামলা করা হয়েছে।
তিনি হলফনামায় আরও দাবি করেন, পুলিশ বাদীকে মিথ্যা কথা মুছলেকাতে স্বাক্ষরের কথা বলে এজাহারে স্বাক্ষর নিয়ে কাউন্সিলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
মামলাটির বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, জিআর মামলা প্রত্যাহারের আইনগত সুযোগ নেই। মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদনটি নথিতে রাখার আদেশ দিয়েছেন। বিনা মন্তব্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করারও আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালি উদ্দিন আকবর বাংলানিউজকে বলেন, আদালতের আদেশ এখনও থানায় আসেনি। আদেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
এমআই/পিডি/টিসি