চট্টগ্রাম: সন্দ্বীপে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার (২৫ মে)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের জন্মস্থান হওয়ায় এ নির্বাচন নিয়ে সবার রয়েছে বাড়তি নজর।
গত ৯ এপ্রিল ঘোষিত তফসিলে ইভিএমে ভোট গ্রহণের কথা বলা হলেও পরবর্তীতে ব্যালটে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত আসে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় সিইসি’র এলাকায় নির্বাচন কেমন হয় তা দেখার অপেক্ষায় ভোটাররা।
গত ২৩ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহানের মৃত্যুর পর এ পদে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৪ প্রার্থী। তারা হলেন-নৌকা প্রতীক নিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন মিশন, মশাল প্রতীক নিয়ে জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ও দোয়াত প্রতীক নিয়ে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান বেলাল।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বাড়তি নিরাপত্তায় গুরুত্ব আরোপ করছে ইসি। এ নিয়ে রোববার (২১ মে) অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক সভায়ও বিশদ আলোচনা হয়। এতে নির্বাচনে সুষ্ঠু করেত জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানানো হয়।
নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শেষ হয়েছে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যা যা করা দরকার তা-ই করা হবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসতে পারে এবং কেন্দ্রের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচনে ৭৯৭ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া মোতায়েন করা হবে ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ৫ প্লাটুন কোস্টগার্ড।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপ উপজেলায় ভোটার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৭৩৫ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৫ জন। এ নির্বাচনে মোট ৮৬টি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা ব্যালট পেপারে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
নির্বাচনী তফসিলে এই নির্বাচনে ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ১১টি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারণ দেখিয়ে ব্যালটে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটারদের ভাষ্য, ব্যালটে ভোট নেওয়ার কারণে নৌকার প্রার্থী স্বস্তিতে থাকলেও অন্য তিন প্রার্থী আতংকিত।
এদিকে মাইক ভাংচুর, কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, প্রচার প্রচারণায় বাধাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন প্রার্থীরা। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনে ৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। ইভিএম এবং সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর দাবিতে নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারের কাছে চিঠিও দিয়েছেন কয়েকজন প্রার্থী।
স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের সব উপ-নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। কিন্তু সন্দ্বীপে নৌকাকে জেতাতে স্থানীয় প্রশাসন ও এমপি’র মদদে ব্যালটে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিইসি’র এলাকায় তারা ন্যাক্কারজনকভাবে ভোট চুরি করবে। এটা কমিশনের ভূমিকাকে দেশব্যাপী প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমরা আতঙ্কিত। ইতিমধ্যে আমার বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলা হয়েছে, মাইক ভাংচুর করেছে।
অন্য দুই প্রার্থী বলেন, সন্দ্বীপ সিইসি’র গ্রামের বাড়ি। এখানে যদি ভোট চুরি হয়, ভোট আদায়ে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু না হয় তাহলে সিইসি এবং কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে এসব বিষয় আলোচনায় আসবে। ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। এটা আওয়ামী লীগের জন্যও নেতিবাচক।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২৩
এমআর/টিসি