চট্টগ্রাম: রতন পাল। জন্মের পর থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।
অন্ধ রতনের সঙ্গে পরিচয় হয় পিএম দাশের। দু’জনের দীর্ঘ কথোপকথনের পর ঘনিষ্ঠতাও বাড়ে। এক পর্যায়ে রতনের বাড়ি-ঘরের কথা জানতে চান পিএম। রতন জানান, মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই তার। দুঃখ প্রকাশ করে রতনের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন পিএম। কিন্তু পিএম দাশ যে পুরোদস্তুর একজন প্রতারক, তা টের পাননি তিনি। যখন বুঝতে পেরেছেন, ততক্ষণে সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে নগরের জঙ্গল সলিমপুরে জমিসহ বাড়ি করে দেওয়ার কথা বললে বেশ খুশি হন রতন। মাকে নিয়ে নিজের ঘরে থাকার স্বপ্ন দেখেন। এরই মধ্যে পিএম দাশ খরচের জন্য কিছু টাকা দাবি করেন। রতন প্রথমে রাজি না হলেও পরে ভিক্ষার কিছু জমানো টাকা দিতে রাজি হন। টাকা পেয়ে ৬ মাস ধরে উধাও সেই প্রতারক। টাকা হারিয়ে নগরে ভিক্ষা করার পাশাপাশি রতন এখন খোঁজেন পিএম দাশকে। কিন্তু হদিস নেই তার।
শুধু অন্ধ রতনই নয়, এ প্রতারকের ফাঁদে পা দিয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে রয়েছেন নৈশ প্রহরী সমির মুহুরীও। যৌবনের পুরো সময়জুড়ে তিনি নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে এক ছাদের নিচে দিন কাটানোর জন্য কিছু টাকা সঞ্চয়ও করেছিলেন। ৮ হাজার টাকা বেতনের ৫ হাজার টাকাই ঘর ভাড়ায় চলে যায় সমিরের। প্রতারক পিএম দাশ নগরের জঙ্গল সলিমপুরে জমিসহ ঘর করে দেওয়ার কথা বলে নিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা।
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের চাকরির কথা বলে প্রতারক পিএম দাশ হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। প্রতারিতদের তালিকায় আছেন গার্মেন্ট কর্মী বানী দে, অনিতা সরকার, মো. সেলিম, সুমা দাশ, মো. মানিক, তানিয়া আক্তার, মো. আলাউদ্দিন, চম্পা দাশ, সুপরা দত্ত, মানিক চন্দ্র শীল, সাইমা আক্তার।
সলিমপুর মৌজায় প্লট বরাদ্দ দেওয়ার নামে শফিউল আলম, ছাবেকুন নাহার, আহমদ উল্লাহ, মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, শামীমা আক্তার, মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. মফিজুল ইসলাম, মো. আরমান, পারভিন আক্তারের কাছ থেকেও নিয়েছেন টাকা।
পিএম দাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন অন্ধ রতন পাল।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি অন্ধ। সারাজীবন ভিক্ষা করে যা টাকা জমিয়েছিলাম সব টাকা দিয়ে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে নিজের ঘরে থাকতে চেয়েছিলাম। প্রতারক পিএম দাশ আমার সব শেষ করে দিয়েছে। আমি জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিএম দাশ নামের এই ব্যক্তিকে একেকসময় একেক স্থানে দেখা যায়। কখনো নিউমার্কেট এলাকায়, আবার কখনো লালদিঘীর পাড়ে। কখনো কখনো কাজির দেউড়ির মোড়ে। সে নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে জমিসহ ঘর, চাকরি, বিদেশি নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরে ভুক্তভোগীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি উধাও হয়ে যান।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ এখনো আমি পাইনি। যদি অভিযোগ পাই ব্যবস্থা নিবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
বিই/টিসি