চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরকে পলিথিনমুক্ত করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ত আইন প্রয়োগ করে চট্টগ্রামকে পলিথিনমুক্ত নগর হিসেবে গড়তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
বুধবার (৩১ মে) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চট্টগ্রাম পলিথিনমুক্ত করতে ১২টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন বা পলিথিন সামগ্রী ব্যবহারের ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে এই ভয়াবহ অবস্থা ব্যাপক আকার ধারণ করে। অপরদিকে, পলিথিন উৎপাদনের কারণে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন শপিং ব্যাগ বা পলিইথাইলিন বা পলিপ্রপাইলিনের তৈরী সামগ্রী আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহণ নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (২০১০ সনের ৫০ নং আইন সংশোধিত) প্রণয়ন করা হয়।
তারা আরও বলেন, চট্টগ্রামের পরিবেশ সংরক্ষণ ও পলিথিনমুক্ত চট্টগ্রাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্লান পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সরকার পলিথিনমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৫৩ নং আইন) প্রণয়ন করেন। উক্ত আইন সমূহ প্রণয়ন হওয়ার পরও এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
সভার ১২ সিদ্ধান্ত হলো:
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পাটজাত পণ্যের উৎপাদন, ব্যবহার বৃদ্ধি করা।
পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পাঠ্য পুস্তকে লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে হবে এবং স্কুল-কলেজ পর্যায়ে কর্মশালার আয়োজন করে ছাত্র-ছাত্রীকে সচেতনতা।
পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধের নিমিত্তে এবং জনসাধারণ/ভোক্তা পর্যায়ে সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা/সেমিনারের আয়োজন পূর্বক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধের নিমিত্তে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা গোয়ান্দা সংস্থা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
পলিথিন তৈরির কাঁচামাল আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। পলিথিনের বিকল্প পণ্য হিসেবে পচনশীল পাটজাত, কাগজের অথবা কাপড়ের পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। পলিথিনের বিকল্প পণ্য উৎপাদনে উদ্যোক্তাকে এগিয়ে আসতে হবে এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আইনের ব্যবহার (যার কাছে পলিথিন ব্যগ থাকবে তার উপর) যথাযথ প্রয়োগ করা।
সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও যথাযথ (চেম্বার, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, পাট উন্নয়ন সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট) কর্তৃপক্ষকে সাথে নিয়ে যৌথ উদ্যোগে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ।
পলিথিন উৎপাদন, ব্যবহার, মজুদ ও বাজারজাতকারীর উপর সংশ্লিষ্ট আইন যথাযথ প্রয়োগের (মোবাইল কোর্টের) মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ।
পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ এ বর্ণিত ১৯টি পণ্য (ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, তুষ-খুদ-কুড়া, পোলট্রি ও ফিস ফিড) পাটের মোড়ক ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা রয়েছে। উক্ত পণ্য সমূহে যে সকল উৎপাদনকারী পলিথিন জাতীয় পণ্য ব্যবহার করেন; তাঁদের বিরুদ্ধে অচিরেই চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা । আগামী ১ জুন থেকে পলিথিন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে কার্যকরী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
সভায় চট্টগ্রাম চেম্বার, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার, ক্যাব, বিভিন্ন ব্যবসায়িক সমিতির প্রতিনিধি, সরকারী সংস্থার কর্মকর্তা এবং এনজিও সংস্থা মতবিনিময় করে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
বিই/পিডি/টিসি