চট্টগ্রাম: সবুজে ঢাকা চট্টগ্রাম উঁচু দালানের ভিড়ে এখন কংক্রিটময়। হারিয়ে যাচ্ছে উন্মুক্ত পরিসর, খেলার মাঠ।
এমন প্রতিকূলতায় নাগরিক জীবনে স্বস্তি দিতে তৈরি হচ্ছে অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্স। এক একর জায়গা জুড়ে এই কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে।
আয়তনের দিক থেকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় টার্ফকোর্ট বা কৃত্রিম ঘাসের মাঠ এই স্পোর্টস জোনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। টার্ফকোর্টটি বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কৃত্রিম ঘাসে আবৃত। যেখানে আউটডোরে থাকছে ফুটবল ও ক্রিকেট মাঠ, ইনডোরে ব্যাডমিন্টন ও বাস্কেটবল কোর্ট এবং একটি সুইমিংপুল।
দেশের শিল্প বাণিজ্যে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে পিএইচপি ফ্যামিলি। যার প্রতিষ্ঠাতা সমাজসেবায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য শিল্পপতি সুফি মিজানুর রহমান। তাঁরই তৃতীয় প্রজন্ম সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে চালু করতে যাচ্ছে অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্স।
নগরীর জিইসি থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক সংলগ্ন রুবি গেট এলাকায় এই স্পোর্টস কমপ্লেক্সের অবস্থান। সমাজকর্মের অংশ হিসেবে আধুনিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনায় কাজ শুরু করেছেন পিএইচপি ফ্যামেলির তৃতীয় প্রজন্ম ভিক্টর মিজান মহসিন ও নোভেদ মিজান ইকবাল। তারা দুইজন পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমানের পৌত্র।
খেলার মাঠ গড়ার এমন উদ্যোগ সম্পর্কে ভিক্টর মিজান মহসিন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, খেলাধুলা আনন্দ ও অনুপ্রেরণার উৎস। তাই আমরা অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্স করার মাধ্যমে খেলাধুলার আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই। নগরীতে যে পরিমাণ মানুষ বাস করে সে পরিমাণে খেলার মাঠের অভাব রয়েছে। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য কায়িক শ্রমের কোনও বিকল্প নেই। একটু ঘাম ঝরানো ক্রীড়াচর্চাই কেবল পারে এই সমস্যার সমাধান দিতে। কিশোর–তরুণসহ সব বয়সী মানুষের কথা ভেবেই গড়ে তোলা হচ্ছে এই অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্স’।
সরেজমিন দেখা যায়, মূল মাঠের কাজ প্রায় শেষ। মাঠের এক প্রান্তে চলছে স্টিল স্ট্র্যাকচারের গ্যালারি নির্মাণকাজ। শ্রমিকদের কেউ লোহা কাটা ও ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছেন। সুইমিং পুলের জায়গায় মাটি সরানো হচ্ছে।
পিএইচপি ফ্যামিলির সিনিয়র ম্যানেজার (হিসাব) জাহিদুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে বেশকিছু টার্ফ কোর্ট গড়ে ওঠেছে। তবে এটি অন্যসব টার্ফ কোর্টের তুলনায় বেশ বড়। এখানে সুবিধার দিক থেকে এবং আয়তনের দিক থেকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় টার্ফকোর্ট তৈরি হচ্ছে। যেটি খেলোয়াড়দের চাহিদা অনুযায়ী দুই ধরনের খেলার উপযোগী করে করা হচ্ছে। এখানে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা যাবে। এরমধ্যে চাহিদা বিবেচনা করে ফুটবল মাঠকে তিন ভাগ করে তিনটি কোর্ট করা যাবে।
ফুটবল বা ক্রিকেটের মধ্যে এ স্পোর্টস কমপ্লেক্স সীমাবদ্ধ থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে শুধু এই দুইটি খেলা নয়, আরও অন্য খেলার ব্যবস্থা থাকবে। বাইরের টার্ফ কোর্টটি ছাড়া ইনডোরে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ৪২ ফুট প্রস্থের একটি কোর্ট করা হচ্ছে। সেখানে চাহিদানুযায়ী বাস্কেটবল ও ব্যান্টমিন্টন খেলার ব্যবস্থা থাকবে। একটি সুইমিংপুল করা হচ্ছে। সেখানে সাঁতার শেখানোসহ সপ্তাহের একদিন নারীদের ব্যবহার করার ব্যবস্থা থাকবে। পুলের আলাদা রেস্টরুম, ড্রেসিং রুম থাকবে। পাশাপাশি ওটার দ্বিতীয় তলায় সান-বাথের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যেখানে চারটি সিট থাকবে।
খেলা দেখার সুযোগ-সুবিধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই এরিয়ার সারাউন্ডিং বাউন্ডারি ১০ এমএম টেম্পার্ড গ্লাসের হবে। গ্লাসের ভেতরে-বাইরে সব দেখা যাবে। শুধু সুইমিং পুলটি প্রাইভেট করে রাখা হবে। এছাড়া মাঠের চারপাশে ৬ ফুটের ওয়াকওয়ে করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাঠের দক্ষিণে একটি গ্যালারি নির্মাণ করা হচ্ছে। গ্যালারিটি দোতলায় হবে। নিচে নামাজ পড়ার সুবিধাসহ রেস্টরুম ও ড্রেসিংরুম থাকবে। তার পশ্চিমে একটি ক্যাফে থাকবে। সেখানে বসে খেতে খেতে খেলাও দেখা যাবে। বলা যায়, সবকিছুই করা হচ্ছে সব বয়সী মানুষের কথা মাথায় রেখে।
এ টার্ফ কোর্ট নিয়ে ভিক্টর মিজান মহসিন বলেন, ‘অক্সিজেন স্পোর্টস কমপ্লেক্সে খেলোয়াড়দের জন্য থাকবে বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধা। থাকবে টপ অফ দ্যা লাইন সরঞ্জাম, পরিস্কার খোলা জায়গা, ক্যাফে, স্পোর্টস সফট ম্যাট। খেলায়োড়রা খেলার সময় পড়ে গিয়ে যাতে আঘাত না পান সেজন্য গ্রাউন্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫০ মিলিমিটারের উন্নতমানের আর্টিফিশিয়াল গ্রাস (ঘাস)। এছাড়া স্পোর্টস সামগ্রীর জন্য স্পোর্টস জোনে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের স্পোর্টস শপ, যেখান থেকে প্রয়োজনীয় ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয় করতে পারবেন খেলোয়াড়রা। আর খেলার শিডিউল নেওয়া বা বুকিং পলিসি রাখা হবে অনলাইনের মাধ্যমে’।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সাল থেকে চট্টগ্রামে গড়ে ওঠেছে টার্ফকোর্ট বা কৃত্রিম খেলার মাঠ। বর্তমানে চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৪টি টার্ফকোর্ট গড়ে উঠেছে।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘এখন টার্ফকোর্ট বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। আমাদের শহরে মাঠের যে অপ্রতুলতা, তা টার্ফ কোর্ট অনেকাংশে পূরণ করছে। ব্যক্তি ও করপোরেট পর্যায়ে এমন উদ্যোগ আরও নেওয়া প্রয়োজন। যেহেতু আমাদের পর্যাপ্ত খেলার মাঠের সংকট রয়েছে, সেহেতু টার্ফকোর্টে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি কর্মজীবী ও ছাত্রদের খেলার সুযোগ বাড়াবে। একসময় দেখা যাবে, এই টার্ফ কোর্টগুলো থেকেই প্রফেশনাল খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
এসি/টিসি