চট্টগ্রাম: প্রতিবছরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয় কাঁচা চামড়ার বাজার দর। আড়তদার থেকে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনার দাম নির্ধারিত থাকলেও মৌসুমি ব্যবসায়ী থেকে আড়তদার এবং মাঠ পর্যায় থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কত দামে চামড়া কিনবেন- এ নিয়ে নেই কোনো নির্দেশনা।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, কোরবানির পশুর মধ্যে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
বিগত ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামে গরু, ছাগল, মহিষ মিলিয়ে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় সাড়ে তিন থেকে চার লাখ। তবে কোরবানির পর নগরীর মুরাদপুর, বিবিরহাট, আতুরার ডিপো, বহদ্দারহাট, চৌমুহনীসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কে জমে যায় কাঁচা চামড়ার স্তূপ। প্রতিটি বড় চামড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত এবং ছোট চামড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চট্টগ্রামে সমিতিভুক্ত আড়তদারের সংখ্যা ১১২ জন। এর বাইরে আরও অন্তত ১৫০ আড়তদার রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এমন দাম নির্ধারণ শুধু ট্যানারি মালিকদের বাঁচানোর জন্যই, বলছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও কোরবানিদাতারা। পাশাপাশি মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জন্য এ দাম নির্ধারণ কোনো সুফল বয়ে আনবে না বলে মনে করেন তারা।
কত দামে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া ক্রয় করা হবে, জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার বাইরে সরকার লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু কাঁচা চামড়া লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে প্রতি বর্গফুটে ১২ থেকে ১৫ টাকা খরচ পড়ে। সুতরাং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনতে হলে নির্ধারিত দামের ১২ থেকে ১৫ টাকা কমে কিনতে হবে।
সরকারের এমন দাম নির্ধারণে সঠিক মূল্য পাবেন না মাঠ পর্যায়ে চামড়া বিক্রি করা সাধারণ মানুষ। আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি বর্গফুট চামড়া ২৫-২৮ টাকা দরে ক্রয় করলে মাঠ পর্যায়ে এই চামড়ার দাম দাঁড়াবে ২০ থেকে ২২ টাকা। অর্থাৎ ১ থেকে দেড় লাখ টাকায় কেনা গরুর চামড়ার দাম হতে পারে মাত্র ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর চামড়ার ব্যবসা করতে গিয়ে হাজার হাজার মৌসুমি ব্যবসায়ী মূলধন হারিয়ে পথে বসছে। অথচ তাদের কথা চিন্তা না করে ট্যানারি মালিকদের বাঁচাতে সরকারের এমন দাম নির্ধারণ। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া সংগ্রহ না করলে তা ট্যানারি পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছাবে?
প্রতিবছর চামড়ার একটি বড় অংশের যোগান আসে কোরবানির পশুর চামড়া থেকে। ট্যানারিগুলোও কোরবানিকে কেন্দ্র করে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে থাকে। চট্টগ্রামের একমাত্র ট্যানারি ‘রিফ লেদার’ গতবছর ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর মধ্যে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ বর্গফুট চামড়া কোরবানি কেন্দ্রিক জবাই করা পশু থেকে সংগ্রহ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
এমআর/টিসি