চট্টগ্রাম: ২৮ মণ ওজনের কালোমানিককে আনা হয়েছে মাগুরা থেকে। এবার তার সঙ্গী হয়ে এসেছে আরও দুইটি বড় গরু।
কালো মানিকের মালিক মো. সোহেল বাংলানিউজকে জানান, পাঁচ বছর বয়সী ফ্রিজিয়ান জাতের এ গরুটি আজই (সোমবার) এনেছেন মাগুরা থেকে। আরও দুই গৃহস্থের সঙ্গে এক ট্রাকে তিনটি বড় গরু এনেছেন। সেগুলোও কালো রঙের। ভাড়া নিয়েছে ৩২ হাজার। প্রতি বছর এ হাটে বড় গরু নিয়ে আসেন তিনি।
তিনি জানান, বড় গরুর ক্রেতারা সব হাটে যায় না। নির্দিষ্ট কিছু হাটে বড় গরুর ক্রেতা থাকে। বিবিরহাট তাদের মধ্যে একটি।
মাগুরার কালোমানিকের পাশাপাশি আছে হাটের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে আছে নোয়াখালীর কালোমনিকও। তিন বছর লালন পালন করে এটিকে বড় করা হয়েছে। বিক্রেতার দাম হাঁকছেন ৯ লাখ টাকা। ইংগিত দিলেন ভালো ক্রেতা পেলে কিছুটা ছাড় দেবেন।
বিবিরহাটের ফুটপাতেই জায়গা করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান আরেকটি বড় গরু। আমান বাজারের ওয়ালী সওদাগরের বাড়ির একটি খামার থেকে আনা হয়েছে ১০ মণের গরুটি। বিক্রেতা দাম হাঁকছেন তিন লাখ আশি হাজার। জানালেন ইতিমধ্যে ২ লাখ টাকা দর উঠেছে এ গরুটির।
আবদুল মালেক নওশাদ কুষ্টিয়া থেকে এনেছেন ১০টি বড় গরু। লাল ও লালচে রঙের গরুগুলো ক্রেতাদের নজর কাড়ছে বেশ। তিনি জানান, সবচেয়ে বড় গরুটির দাম সাত লাখ চেয়েছি। শৌখিন ক্রেতারা এসব গরু পছন্দ করছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ৬৫-৭০ টাকা প্রতি কেজি ভুষি। কাঁচা ঘাসের দাম, খড়ের দাম, ওষুধপত্রের দাম ও শ্রমিকের দাম বেশি এবার। সেই হিসাবে গরুর দাম বেশি না। কুষ্টিয়া থেকে নিজের পালা দশটি গরু আনতে গাড়ি ভাড়া লেগেছে ৪০ হাজার টাকা।
বিক্রেতারা আশা করছেন, মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে জমে উঠবে কোরবানির পশুর হাট। বাসায় বেশি দিন লালন পালন করার ঝামেলা এড়াতে শেষদিকে কোরবানির গরু কিনেন অনেক গৃহস্থ।
সরেজমিন দেখা গেছে, ইজারাদার না থাকায় এবার জৌলুস কম বিবিরহাটের। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) খাস কালেকশনের মাধ্যমে স্থায়ী এ পশুর হাটটি পরিচালনা করছে। এস্টেট বিভাগের কর্মীদের পাশাপাশি অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবকের সহায়তায় এ হাটের হাসিল তোলা হচ্ছে। অন্যান্য বছর রেললাইন, মূল সড়কের দুই পাশে শত শত গরু উঠলেও এবার তেমনটি চোখে পড়েনি। তবে মূল হাটে বড় বড় গরুর পাশাপাশি মাঝারি ও ছোট আকারের বেশ কিছু গরু দেখা গেছে। বেশ কয়েকজন নারী ক্রেতাকে দেখা গেল পছন্দের গরুর দরদাম করছেন। যথারীতি গরুর বাজারের পাশের গলিতে ছাগলের হাট বসেছে। ছোট বড় ছাগল উঠেছে সেই হাটে। ভারতের গাড়ল ও ভেড়া মিলছে বিবিরহাটে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খামারি ও বেপারীদের রান্নাবান্না, ঘুমানো সবই হচ্ছে বিবিরহাটে। গরুর দেখাশোনার জন্য তারা গরুর পাশে মাচানের ওপর অস্থায়ী ঘরবসতি সাজিয়েছেন। নিজেরা সংঘবদ্ধ হয়ে পালাক্রমে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন গরু।
চসিকের ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী বাংলানিউজকে বলেন, বিবিরহাটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম গরু উঠেছে এবার। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের জন্য মুরাদপুর মোড়ে সড়ক বন্ধ থাকায় গত বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ বাড়িয়ে ২ কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিবিরহাট ইজারা নেয়নি কেউ। তাই বৈশাখ মাস থেকে খাস কালেকশনে চসিক বিবিরহাট পরিচালনা করছে। এর জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খাস কালেকশনের ১০ শতাংশ আদায় ও সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যয়ের বিধান রয়েছে। সেই হিসাবে প্রায় ২০০ কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবককে কাজে লাগানো হয়েছে হাসিল আদায় ও শৃঙ্খলা রক্ষায়।
তিনি জানান, বিবিরহাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। জাল নোট শনাক্তের বুথ বসানো হয়েছে। পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প রাখা হয়েছে। ভেটেরিনারি টিম রাখা হয়েছে পশু চিকিৎসার জন্য। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপরিচিত লোকজনের দেওয়া কিছু না খেতে এবং কেউ টাকা দাবি করলে পুলিশকে জানাতে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি