চট্টগ্রাম: রাঙ্গুনিয়ার পদুয়ায় বাবার কবরের পাশে একুশে পত্রিকার সম্পাদক আজাদ তালুকদারকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। বুধবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজায় অংশ নেন রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র শাহজাহান সিকদার, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী, জাতীয় মৎস্য পদক বিজয়ী উপজেলার পদুয়া সুখবিলাস ফিসারিজ অ্যান্ড প্লান্টেশনের চেয়ারম্যান এরশাদ মাহমুদ, পদুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু জাফর, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইদ্রিস আজগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নুরুল আজিম সিকদার, প্রয়াত আজাদ তালুকদারের বড় ভাই শাহাদাত হোসেন তালুকদার প্রমুখ।
জানাজা শেষে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পক্ষে ফুল দিয়ে শোক জানান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শোক জানায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন।
রাজধানীর পান্থপথের বিআরবি হাসপাতাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম শহরে এসে পৌঁছায় আজাদ তালুকদারের মরদেহবাহী ফ্রিজার অ্যাম্বুলেন্সটি। এরপর নেওয়া হয় চান্দগাঁও সিডিএ আবাসিক এলাকার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের মুর্দা গোসল কেন্দ্রে। সেখানে শেষ গোসল দিয়ে শেষযাত্রার জন্য জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে আনা হয়। সেখানে জোহরের নামাজের পর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সিইউজে সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম বলেন, আজাদ তালুকদার একজন অকুতোভয় ও সাহসী সাংবাদিক ছিলেন। তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে সমাজ ও দেশকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সাংবাদিকতায় অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
এরপর আজাদ তালুকদারের কফিনে ফুল দিয়ে শোক জানান চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী, বিএফইউজের সহ সভাপতি শহীদ উল আলম, সিইউজে সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, সিইউজের সিনিয়র সহ সভাপতি রুবেল খান যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মহরম হোসাইন, সুপ্রভাত ইউনিটের চিফ স ম ইব্রাহিম, প্রতিনিধি ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত চিফ সোহেল সরওয়ার প্রমুখ।
ফুল দিয়ে শোক জানান চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক প্রমুখ।
বুধবার (২ আগস্ট) ভোররাত ৩টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সম্পাদক আজাদ তালুকদারের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। বেশ কিছুদিন আগে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। ব্যয়বহুল বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কেমো নেয়ার মাধ্যমে দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নেন একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার।
আজাদ তালুকদার ১৯৭৮ সালের ২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর পদুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা নাম মৃত খায়ের আহমেদ তালুকদার, মা মৃত জাহান আরা বেগম। ১৯৯৫ সাল থেকে সাংবাদিকতা করে আসছেন আজাদ তালুকদার। তিনি এর আগে একাত্তর টিভি, বৈশাখী টিভি, একুশে টিভি ও আন্তর্জাতিক ফিচার সংস্থা-সান ফিচার সার্ভিসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। এছাড়া কপ-১৭ (ডারবান), কপ-১৮ (দোহা), কপ-১৯ (ওয়ারশো) কাভার করার পাশাপাশি পেশাগত প্রয়োজনে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।
করোনার সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালে মাত্র ১৪ দিনে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল ‘চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আজাদ তালুকদার। করোনাকালে সবাই যখন চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে চিন্তার অস্থির, তখনই তাঁরা করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন।
২০০৪ সাল থেকে একুশে পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, সাফল্য নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আজাদ তালুকদার।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি