চট্টগ্রাম: ভারী বর্ষণ, কর্ণফুলীর জোয়ার আর ‘অভিভাবকহীন খাল-নালার’ কারণে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহালেন নগরবাসী। নিচু এলাকার সড়কে হাঁটু থেকে কোমরপানি ছিল সকালে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় টাইগারপাসের আমবাগান আবহাওয়া অফিস ১২৫ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করেছে। যদিও এ সময় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস রেকর্ড করেছে ৪২ দশমিক ৮ মিমি বৃষ্টি।
সরেজমিন দেখা গেছে, শুধু বহদ্দারহাট নয় সকালে মাত্রাতিরিক্ত পানি উঠেছে নগরের তিনপোল, রিয়াজউদ্দিন বাজার, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, শান্তিবাগ, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজারসহ নিচু এলাকায়। সড়কগুলো উঁচু করার কারণে হাঁটুপানি দেখা গেলেও আশপাশের বাড়িঘরে কোমর পানি ছিল কর্ণফুলীর জোয়ারের সময়। এ সময় অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের নিচতলায় পানি ঢুকে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রিয়াজউদ্দিন বাজারের অনেক দোকানে পানি ঢুকে নষ্ট হয় পণ্যসামগ্রী।
আগ্রাবাদের বাসিন্দা এমএ কাদের বাংলানিউজকে বলেন, আগে বৃষ্টি-জোয়ার একসঙ্গে হলে এক্সেস রোড ডুবে যেত। এখন সেটি এত উঁচু করা হয়েছে যে আশপাশের বাসাবাড়ির নিচতলায় গলাপানি হলেও বাইরের কেউ দেখে না। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল পেতে হলে চসিক, সিডিএসহ সরকারি সব সংস্থার আন্তরিক সমন্বয়, কমিটমেন্ট দরকার।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. মোবারক আলী বাংলানিউজকে বলেন, জলাবদ্ধতা হয়নি, ভারী বর্ষণ, পূর্ণিমার জোয়ার আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় জলজট হয়েছে। খাল ও নালার গভীরতা কমে যাওয়া এবং নদীতে জোয়ার থাকায় বৃষ্টির পানি দ্রুত নামতে পারেনি। চাক্তাই খালে পানির ধারণক্ষমতা যেমন কমে গেছে তেমনি নাব্যতাও।
মেয়রের বাড়ি-গাড়ির ছবি ফেসবুকে সয়লাব হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বহদ্দারহাট এমনিতে নিচু এলাকা। তারওপর চাক্তাই খালের গভীরতা এখন ২-৩ ফুটের বেশি নেই। তাই দুই নম্বর গেট, মুরাদপুরের নালা থেকে আসা পানি চাক্তাই খাল দিয়ে নামতে পারেনি দ্রুত। মেয়রের বাড়িতে গত বছরও পানি উঠেছিল। এর আগেও প্রতিবছর উঠেছে। এটা নতুন কিছু নয়।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সিডিএ যে খাল ও নালাগুলোর কাজ করছে, স্লুইসগেট বসিয়েছে সেগুলো এখনো চসিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এসব স্লুইসগেট অপারেট করার জন্য জনবল নেই, পাম্প হাউস বসানো হয়নি। আবার নাগরিকদের সচেতনতার অভাবে এখনো নালায় ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। আমরা নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ কাজের বাইরে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে ৪১টি ওয়ার্ডে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দিয়ে মাটি উত্তোলনের কাজ করিয়েছি।
বৃষ্টির পানি আটকে যাওয়া স্থানে চসিকের কর্মীদের দেখা যায়নি এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সুপারভাইজারদের হোয়াটস আপ গ্রুপের মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ করেছি। সেগুলো নোট করেছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০১৭ সালে অনুমোদিত এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুনে শেষ হয়। মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। এরপর আবারও মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। কাজের অগ্রগতি ৭৬ শতাংশের বেশি। প্রকল্পের আওতায় খালগুলোর দুই পাশে ১৭৬ কিলোমিটার প্রতিরোধ দেয়ালের মধ্যে ১১৮ কিলোমিটারের বেশি নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৫টি ব্রিজ ও ৬টি কালভার্টের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়েছে। পাঁচটি খালের মুখে জলকপাটের (স্লুইসগেট) নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। তবে খালের পাশে ৮৫ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে সাড়ে ১৫ কিলোমিটার নির্মাণ করা হয়েছে। খাল ও নালার অনেক জায়গা বেদখল হয়ে যাওয়ায় বহুমুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে সিডিএ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন একটি খাল খনন করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি