চট্টগ্রাম: আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার পরে আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা এক লাখ টাকা তার মাধ্যমে লেনদেন করেন বলে আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে জানিয়েছেন মুছার আত্মীয় কাজী আল মামুন।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে কাজী আল মামুন সাক্ষ্য দেন।
কাজী আল মামুনের (৩৫), নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার খলিসাখালি গ্রামের বাসিন্দা। মিতু হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা কাজী আল মামুনের সাবেক স্ত্রীর আপন খালু।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে কাজী আল মামুন জানান, ২০১৬ সালের শুরুর দিকে কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা স্বপরিবারে আমাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। মুছা আমার সাবেক স্ত্রী আবেদা জান্নাত মিম এর আপন খালু। তখনই মুছার সাথে আমার প্রথম দেখা ও পরিচয়। সেই সুবাদে মাঝে মাঝে মুছা আমার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নম্বর এবং আমার স্ত্রী মোবাইল নম্বরে ফোন করতেন। এরপর ২০১৬ সালের জুন মাসের শুরুর দিকে মুছার ব্যবহৃত মোবাইল যার শেষ দুই ডিজিট ৯১, সেটি থেকে আমাকে ফোন দেয়। ফোন করে আঙ্কেল (মুছা) বলে, তোমার নম্বর বিকাশ আছে? আমি বলি, আমার দুটি নম্বরই বিকাশ করা। আমি পাল্টা জানতে চাই, আঙ্কেল আমার বিকাশ নম্বর কেন চাচ্ছেন। তখন তিনি বলেন, আমার এসপি স্যারের এক লোক আমাকে কিছু টাকা পাঠাবে। তখন আমি আবার বলি, আপনার টাকা আমার কাছে কেন পাঠাবে? তখন তিনি (মুছা) বলেন, আমি চিটাগাং এ নাই। বাইরে আছি। তিনি বলেন, তুমি ক্যাশ করে রাখিও। আমার কোনো লোক পরে পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করলে (বিকাশ নম্বর দিলে) তুমি টাকাগুলো বিকাশ করে দিও।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কাজী আল মামুন আদালতে বলেন, ফোন করে এক লোক বলেন, আমি মুছাকে চিনি কিনা? তখন আমি বলি, হ্যাঁ মুছা আমার আত্মীয়। তাকে আমি চিনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, আপনি কে? তখন তিনি বলেন, আমি মুছা এবং এসপি বাবুল আক্তার স্যারের পরিচিত লোক। মুছা আপনার কাছে কিছু টাকা পাঠাতে বলেছে, আপনার বিকাশ নম্বর দেন। তখন আমি নিজের দুটো ফোন নম্বর তাকে দিই। উনি বলেন, দুটো নম্বরে তো ২৫ হাজার করে মোট ৫০ হাজার টাকা যাবে। আমি আপনাকে টাকা পাঠাব ১ লাখের মত। আপনি আরো একটি নম্বর দেন। পরে আমার বন্ধু মোস্তাইনের দোকান আছে (বিকাশ এজেন্ট) তার নম্বরটি দিই। সেই নম্বরটি এখন মনে নেই। কিছু সময় পরে, আমার দুটি নম্বরে ২৫ হাজার করে মোট ৫০ হাজার এবং মোস্তাইনের বিকাশ এজেন্ট নম্বরে ৪৯ হাজার টাকা আসে। দোকানের নম্বরে আসা টাকাটা আমি ক্যাশ করে নিয়ে যাই। আমার দুটি নম্বরে থাকা টাকা মোবাইলেই থাকে। এর দুই দিন পরে এক লোক মুছার রেফারেন্স দিয়ে বলে আমি চট্টগ্রামের রাঙুনিয়া থেকে বলছি। নাম বলেছিল, এ মুহূর্তে স্মরণে নেই। তিনি বলেন, তোমার কাছে যে টাকাগুলো পাঠিয়েছিল তা পাঠিয়ে দাও।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে কাজী আল মামুন বলেন, পরে ২০২১ সালের ১০ মে আমাকে পিবিআই গ্রামের বাসা থেকে নিয়ে আসে। যশোর পিবিআই অফিসের একজন কর্মকর্তা (স্নেহাশীষ) ফোন দেন। তখন আমি কোচিং এ পড়াচ্ছিলাম। তারপর তিনি আমাকে নিয়ে আসে, তারপর বলে সন্তোষ স্যার কথা বলবে। ফোনে আমাকে সন্তোষ কুমার চাকমার (মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা) সাথে কথা বলিয়ে দেন। সন্তোষ স্যার বলেন, একটা মামলার বিষয়ে তথ্য নেয়ার আছে, চট্টগ্রামে যেতে হবে। যশোরের পিবিআই কর্মকর্তারা আমাকে ঘাটিয়াপাড়া (মধুমতী নদীর তীরে) পর্যন্ত এনে দেয়। সেখান থেকে ঢাকা হয়ে পিবিআইর সহায়তায় চট্টগ্রাম পিবিআইতে আসি ১০ মে ২০২১ তারিখে। মিতু হত্যা মামলার আইও সন্তোষ কুমার চাকমার কাছে বুধবার আদালতে যা বলেছেন সেসব কথা সেদিন বলেছিলেন।
পরে বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন সাক্ষী কাজী আল মামুনকে জেরা করেন। এর আগে বুধবার সকালে আগের দিনের সাক্ষী সাইফুল হককে জেরা করেন বাবুলের আইনজীবীরা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, মিতু হত্যা মামলায় কাজী আল মামুনের সাক্ষ্য ও আসামি পক্ষের জেরা অংশিক শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবারও কাজী আল মামুনকে আসামি পক্ষ জেরা করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৩
এমআই/পিডি/টিসি