চট্টগ্রাম: দুই বছর আগে যে নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন ছালেহ আহমেদ (৫০) ঠিক সেই নালার পাড়ে সংবাদ সম্মেলন করে করুণ আর্তি জানালেন সাদেকুল্লাহ মহিম। তার আবেগাপ্লুত কণ্ঠে চোখ ভিজছিল স্রোতাদের।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ঠিক বিকেল সাড়ে তিনটায় মহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই বছর হয়ে গেল, এখনো বাবার লাশটাও খুঁজে পেলাম না। সবাই তো অন্তত বাবার কবর জেয়ারত করতে পারেন।
২০২১ সালের ২৫ আগস্ট নগরের মুরাদপুর মোড়ে চশমা খালে পা পিছলে পড়ে যান সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদ। তার তলিয়ে যাওয়ার করুণ দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। কিন্তু তার মরদেহ, কঙ্কাল কিছুই উদ্ধার করা যায়নি।
মহিম বলেন, চসিক ও সিডিএর গাফিলতির কারণে আমাদের জীবন থেকে চিরতরে বাবা শব্দটি মুছে গেছে। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই খালে নিরাপত্তা দেয়াল দেওয়া থাকলে কিংবা জলাবদ্ধতা না হলে দুর্ঘটনার কোনো প্রশ্নই আসে না। খালে ময়লা আবর্জনা না থাকলে অন্তত বাবার লাশটা ফিরে পেতাম। ঘটনার পর চসিক কিংবা সিডিএ কেউ দায় নেয়নি। একটা সংস্থা আরেকটার ওপর দায় চাপিয়েছে। আমার বাবার দুর্ঘটনার এক মাস পর আগ্রাবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাদিয়া নালায় পড়ে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, বাবা ছিলেন আমাদের পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। তিনি সব ব্যয় নির্বাহ করতেন। কখনো আমাদের কষ্ট পেতে দেননি। অভাব বুঝতে দেননি। নিজে পরিশ্রম করলেও আমাদের রাজপুত্র-রাজকন্যার মতো চালিয়েছেন। বাবা তলিয়ে যাওয়ার পর চসিক বড় মুখ করে একটা চাকরির আশ্বাস দেয়। আমি তখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ি। মেয়র সাহেব আমাকে চাকরি দিলেন পেট্রল পাম্পের শ্রমিক হিসেবে। আমাকে কেন চসিকের পাম্পে দিনে ১২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে শ্রমিক হিসেবে গাড়িতে পেট্রল পুরতে হবে। তারা বাবাকে দুনিয়া থেকে গায়েব করে আমাকে শ্রমিক বানিয়েছিল। আমি অনেক অনুরোধ করেছিলাম উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায় চাকরিটা পরিবর্তন করে দিতে। অন্তত অফিস পিয়ন হিসেবে দেওয়া যেত। আমি বাধ্য হয়ে অমানবিক চাকরিটা ছেড়ে দিই। তারপর কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। আদালত আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে রুল জারি করলেও তারা জবাব দেয়নি।
মহিম বলেন, ‘পরিবারে আমার বোন, মা আর আমি আছি। আত্মীয়স্বজনদের সহযোগিতায় কোনোভাবে আমাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। খুব কষ্ট করে দিনযাপন করতে হচ্ছে আমাদের। ’
বাংলাদেশ সময়: ২২২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি