চট্টগ্রাম: অ্যাডভোকেট মো.কামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য। এক সময় ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর।
মো.কামাল উদ্দিন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সহ সম্পাদক।
চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, গত ২২ জুন আসামি মো.কামাল উদ্দিন আদালতে অনুপস্থিত থাকলে জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করার আদেশ দেন বিচারক। আগামী ১৬ অক্টোবর মামলাটি সাক্ষীর জন্য রয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১০ই জানুয়ারি চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে অ্যাডভোকেট মো.কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৩, ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলাটি গ্রহণ করে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোকে প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন। পিবিআই ২০২২ সালের ২৪ জুলাই ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল করলে মো. কামাল উদ্দিন হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।
গত ৫ মে আদালতে মামলাটি অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য থাকলেও মো.কামাল উদ্দিনের অনুপস্থিতে অভিযোগ গঠনের জন্য সময়ের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। কিন্তু সময় নিয়েও আদালতে হাজির না হওয়ায় তার জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী কামরুল হাসান বলেন, আসামি মো. কামাল উদ্দিনের ফরেনসিক রিপোর্ট, জব্দ তালিকা এবং তদন্ত প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ট্রাইব্যুনাল মো. কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সালের ২৫(১) (ক)/২৯(১)/ ৩১ (১) ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে বুধবার (৩০ আগস্ট) সকাল পৌনে দশটার দিকে অ্যাডভোকেট মো. কামাল উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইলে প্রতিবেদকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি মামলার কাজে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আছেন বলে জানান। সেখানে গিয়ে সকাল সোয়া এগারোটার দিকে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় তার হাতে একটি মামলার ফাইল ছিল। তিনি মামলার শুনানি আছে বলে, চতুর্থ তলার পশ্চিম পাশ দিয়ে ফাইল নিয়ে তৃতীয় তলা দিয়ে চীফ জুড়িশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালতের দিকে চলে যান।
চট্টগ্রাম জেলা পিপি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পলাতক ব্যক্তি উন্মুক্ত স্থানে হাটতে পারে না। সেখানে আদালতে মামলা পরিচালনা করতেও পারবে না। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নজরে আসলে সমিতি অবশ্যই ব্যবস্থা নিবেন। আইনজীবী হয়ে বেআইনি কাজ করা উচিত নয়। নৈতিকভাবে এটা অনৈতিক কাজ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান। আইনজীবী বা যে কেউ হোক আইনগতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। জেনে শুনে আইনভঙ্গ করা উচিত নয়।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করার পরও মামলা পরিচালানা করতে বাধা নেই। কিন্তু এটা নৈতিকতা বিরোধী। পুলিশ চাইলে গ্রেফতার করতে পারবে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা বিষয়ে অ্যাডভোকেট মো. কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অনেকে অনেক কিছু বলবে, এই মামলা অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। আদালতের কাগজপত্রের রেফারেন্স উল্লেখ করে জামিন কিনা জানতে চাইলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
চট্টগ্রাম জেলার কোর্ট পরিদর্শক জাকির হোসাইন মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দৈনিক শত শত ওয়ারেন্ট আসে। এটা কোন কামাল দেখে দেখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২৩
এমআই/পিডি/টিসি