চট্টগ্রাম: অরুণ কুমার দে। বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়নে।
সম্প্রতি অরুণ কুমার দের পরিবার দারস্থ হন বোয়ালখালী উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে। তিনি জায়গার খতিয়ান দেখেন। তাদের বাবার সম্পত্তি কোন দাগে কতটুকু, কোন মৌজায় রয়েছে সেটি বের করে দেন দশ মিনিটেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানের অংশ হিসেবে বোয়ালখালী উপজেলার ভূমি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, বোয়ালখালী উপজেলা ভূমি অফিসে নথি খোঁজার জন্য কয়েকজন কর্মচারীকে রাতদিন পরিশ্রম করতে হতো। এ নথি পেতে সময় লাগতো দিনের পর দিন, কখনো আবার মাসের পর মাস! এ নথি যেন সহজে খুঁজে পাওয়া যায় সেজন্য বোয়ালখালীতে 'ডিজিটাল রেকর্ড রুম' প্রস্তুত করেছেন তিনি। ফলে ডিজিটাল রেকর্ড রুম থেকে ৫ মিনিটের মধ্যেই যেকোনো নথি খুঁজে করা সম্ভব হচ্ছে। এতে কমেছে জনগণের হয়রানি, কমেছে সময়। রোধ হয়েছে অর্থের অপচয়।
সরকারি খাস জমি দখলে নিয়ে অনেকেই করেছেন বাড়ি, খামার, ও চাষাবাদ। স্মার্ট ম্যাপের মাধ্যমে সরকারী খাস জমি, নদী, খাল রাস্তার জমি দখলকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এটি জানার পর অনেকেই খাস জমি ছেড়ে দিয়েছেন নোটিশ পেয়েই।
এক বছরের প্রচেষ্টায় বোয়ালখালী উপজেলার সকল বিএস এবং আরএস মৌজা ম্যাপ ডিজিটাইজ করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আলাউদ্দিন। ডিজিটাইজ মৌজা ম্যাপের সঙ্গে ভূমি সংক্রান্ত রেকর্ডগুলো সংযুক্ত করে একটি স্মার্ট ভূমি ম্যাপ প্রস্তুত করেছেন তিনি। এই স্মার্ট ভূমি ম্যাপের মাধ্যমে অফিসে বসেই জমির অবস্থান, অবস্থা, পরিমাণসহ গুরত্বপূর্ণ তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও খাস, অর্পিত, পরিত্যক্ত, সিকস্তি, সায়রাত মহাল, সংস্থার জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। তহসিলদাররা ব্যবহার ভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর নিতে পারছেন সহজেই।
২০২২ সালের ৭ আগস্ট বোয়ালখালী উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। এরপর নানা উদ্যোগে বদলে দিয়েছেন বোয়ালখালী উপজেলা।
ওয়ারিশ সনদ জাল রোধে কিইউআর কোড যুক্ত অনলাইন ওয়ারিশ সনদ ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। যা বর্তমানে বোয়ালখালী উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় চলমান রয়েছে।
অর্পিত সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ডাটাবেইস প্রস্তুত করে অর্পিত জমি সমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। যার ফলে এই এক বছরে বোয়ালখালী উপজেলায় অর্পিত সম্পত্তির লীজ ফি আদায়ের হার দ্বিগুণ হয়েছে।
মিস মামলায় জনগণ যেন হয়রানি না হয় সে লক্ষ্যে সপ্তাহে দুদিন শুনানি নিয়ে মিস মামলার জট কমানো হয়েছে। প্রায় শতভাগ নামজারী ২৮ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বোয়ালখালীর করলডাঙ্গা ইউনিয়নের অসীম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ভূমি অফিসে না গিয়েই ভূমিসেবা গ্রহণ করা যাচ্ছে। ঘরে বসেই অনলাইনে জমির নিবন্ধন, নামজারি, খাজনাসহ সব ধরনের কাজ করা যাচ্ছে। এতে সময়, শ্রম এবং খরচ-সবই সাশ্রয় হচ্ছে। স্মার্ট ভূমি ম্যাপ তৈরির ফলে খাস জায়গা, নদী-খাল ও রাস্তার জায়গা রক্ষা করা সম্ভব হবে।
এ বোয়ালখালী উপজেলায় এক বছরের দায়িত্ব শেষে এবার মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বদলি হয়ে যাচ্ছেন সীতাকুণ্ডে। সেখানেও তিনি সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্ব সামলাবেন। তাঁর প্রত্যাশা যেভাবে বোয়ালখালী উপজেলার ভূমি সেবায় পরিবর্তন এনেছেন সেভাবেই বদলে দিতে চান সীতাকুণ্ড উপজেলার ভূমি ব্যবস্থাপনাও।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, শুরু থেকে আমি চেষ্টা করেছি সেবাপ্রার্থীদের হয়রানিমুক্ত ভূমি সেবা প্রদান করতে। এ এলাকার মানুষের সহযোগিতায় স্মার্ট ভূমি সেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। এ স্মার্ট ভূমি সেবার মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত অনেক জটিল বিষয় খুব সহজে স্বল্প সময়ের সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩
বিই/পিডি/টিসি