চট্টগ্রাম: নিখুঁত শিল্পকর্মগুলো যেন একেকটা গল্পের ক্যানভাস। বর্ণিল তুলির আঁচড়ে মূর্ত বিষয়াবলিতে চোখ আটকে যাচ্ছে দর্শকের।
চট্টরঙ্গ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন শুক্রবারের (৮ সেপ্টেম্বর) চিত্র এটি। এমএ আলী সড়কের জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পাচার্য জয়নুল আর্ট গ্যালারিতে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি আর্ট ক্লাবের এ প্রদর্শনীকে ঘিরে শিল্পবোদ্ধাদের পাশাপাশি তরুণদেরও মেলা বসেছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, বৈচিত্র্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, জীবন-জীবিকা, আচার কী নেই শিল্পকর্মের বিষয়বস্তুতে। গ্যালারিতে ঢুকতেই চোখে পড়লো প্রীতিলতার প্রতিকৃতি। অ্যাক্রেলিক মাধ্যমে আঁকা মহেশখালীর মিষ্টি পানের বাটার শিল্পকর্মটা এতটা নিখুঁত মনে হবে ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি। মারকার ও কলম দিয়ে আঁকা তাসকিনের কাজটাও চমৎকার। প্রগতি চাকমার ‘কালার অব ম্রো কালচার’, ফারিয়া আকতারের ‘ঈগলস আই’সহ প্রদর্শিত প্রতিটি শিল্পকর্মই চমৎকার। বাংলা পোস্টার ও আরবি ক্যালিগ্রাফিগুলো ঘিরে কৌতূহল ছিল অনেকের। অসাধারণ বিমূর্ত শিল্পকর্মও ছিল বেশ কয়েকটি। শিল্পকর্মে কেউ ফুটিয়ে তুলেছেন জেলেদের মাছ ধরা, কেউ এঁকেছেন কর্ণফুলী নদী, কেউ এঁকেছেন পাতা ঝরার দৃশ্য। কালো সাম্পান, উত্তাল সমুদ্র, সহচরী, গোধূলি বেলার মনোরম দৃশ্যও ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পীরা।
শুক্রবার গ্যালারির তৃতীয় তলায় ছবি আঁকার ক্লাস শেষ করে একঝাঁক ক্ষুদেশিল্পী ঢুকে পড়ে প্রদর্শনীতে। তাদের চোখে মুখে ছিল বিস্ময়ের ছাপ। এত সুন্দর সুন্দর একেকটা ক্যানভাস। এত উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়ায় আলোর দ্যুতি।
প্রদর্শনীতে কথা হয় সাংবাদিক স্বরূপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তিনি বলেন, এককথায় অপূর্ব কিছু শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে। সমাজে সৃজনশীল ও মননশীলতার চর্চায় নানা কারণে ভাটা পড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে একদিকে সবকিছু সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে গুণী শিল্পীরা অবাধ পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন না। আমি আশা করবো চট্টরঙ্গ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবেন উদ্যোক্তারা।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তিন দিনের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভাস্কর অলক রায়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে তিনি এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অনুবাদক ও শিল্প সমালোচক আলম খোরশেদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আর্ট ক্লাবের উপদেষ্টা আকিব কামাল। অতিথিরাও গ্যালারি জুড়ে প্রদর্শিত শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন।
আয়োজকরা জানান– প্রায় পাঁচ শতাধিক শিল্পকর্ম থেকে যাচাই–বাছাই শেষে ৫০ জন শিল্পীর প্রায় ১০০ শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শিল্পীর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের শিল্পপ্রেমী ও নিজ উদ্যোগে শিল্পচর্চা করেন এমন শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ও চট্টগ্রামের বাইরে অবস্থানরত এমন তরুণ শিল্পীও আছেন বেশ কয়েকজন।
২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আর্ট ক্লাব প্রতিষ্ঠা হয়। সংগঠনে ২০ জনের মতো সদস্য রয়েছেন। এটি ক্লাবের আয়োজনে দ্বিতীয় প্রদর্শনী। সংগঠন সংশ্লিষ্টরা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আর্ট ক্লাব সূচনালগ্ন থেকেই চট্টগ্রামের তরুণ শিল্পপ্রেমীদের নিয়ে কাজ করছে। উৎসাহ পায় এমন কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছে। সর্বোপরি চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে শিল্প প্রদর্শনী পরিদর্শন, শিল্পকর্ম সংগ্রহের অভ্যাস ও আগ্রহ সৃষ্টিতে কাজ করছে। ‘চট্টরঙ্গ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ২০২৩’ তারই বহিঃপ্রকাশ।
প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রর্দশনী সবার জন্য উন্মুক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি