চট্টগ্রাম: স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। এই উদ্যোগের সুফল যেন সাধারণ মানুষ পায় এবং ডাক্তার ও হাসপাতালের ওপর যাতে মানুষ আস্থা স্থাপন করতে পারে সেজন্য এসবের সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাদের আরো কিছু কাজ করা প্রয়োজন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কোন উচ্চতায় রয়েছে তা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকে জি-২০ সম্মেলনে যাচ্ছেন, জি-২০’র বর্তমান প্রেসিডেন্ট হচ্ছে ভারত। এই উপমহাদেশ থেকে আর কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রাম ও বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসবকথা বলেন।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ম্যানেজিং ট্রাস্টি মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খাঁন, ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. মোরশেদ হোসেন ও অধ্যক্ষ প্রফেসর অসীম বড়ুয়া।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের সরকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গত প্রায় ১৫ বছরে সরকারি বেসরকারি বহু মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করেছে। সারাদেশে প্রায় ১২ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে, প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। এটি আশপাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ কোথাও নেই। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসব কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে বিধায় স্বাধীনতার পর আমাদের গড় আয়ু যেখানে ছিল ৩৯ বছর সেটি এখন ভারত পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের অতিরিক্ত মুনাফা লাভের প্রবৃত্তি আমাদের চিকিৎসাবো এবং ডাক্তারদের ওপর আস্থাহীনতা তৈরি করছে, এবং সাধারণ মানুষকে প্রচণ্ড ভোগাচ্ছে। অনেক সময় শোনা যায়, রোগীকে আইসিওতে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, দিয়ে রেখেছেন। রোগী এমনিতেই মৃত্যুবরণ করবে, সেটাকে লাইফ সাপোর্টে দিচ্ছে। এ রকম অহরহ ঘটনা শুনতে পাই। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ও ভূমিকা রাখতে পারে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে প্রয়োজন সদিচ্ছার।
দেশের স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর পাশাপাশি ডাক্তার এবং হাসপাতালের ওপর যাতে মানুষ আস্থা স্থাপন করতে পারে সেজন্য মানুষের আস্থা অর্জন প্রয়োজন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশমুখী অনেক রোগীকে আমি জিজ্ঞেস করি, ভারতের ব্যাঙ্গালুর, দিল্লি, কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্যে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে কেন যান? তখন তারা বলেন, বাংলাদেশে তো ডাক্তার ভালো করে কথা বলেন না। যিনি চালু ডাক্তার. তার অ্যাসিট্যান্টরা রোগী দেখেন, আর তিনি দু’মিনিট কথা বলেন। আর বিদেশে ডাক্তাররা প্রয়োজনে আধঘণ্টা কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের ডাক্তাররা অনেক মেধাবী, আমাদের একজন ডাক্তার যদি ভালো করে রোগী দেখেন, তিনি যেই ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন, সেটি ইউরোপ আমেরিকায়ও দিতে পারে না। আমি ইউরোপে অনেকদিন ছিলাম, সেখানকার ডাক্তারদের তুলনায় আমাদের দেশের ডাক্তারদের আইকিউ অনেক বেশি। আমাদের ডাক্তারদের অভিজ্ঞতালব্ধ যে জ্ঞান, সেটা ইউরোপের ডাক্তারদের নেই। কিন্তু যত ভালো ছাত্রই হোক, মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা না দিলে যেমন পরীক্ষা ভালো হয় না, তেমনি মনোযোগ দিয়ে রোগী না দেখলে তো রোগীই ভালো হবে না। প্রতিবছর মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে। আমাদের মেধাবী ডাক্তাররা যদি আরেকটু মনোযোগ দিয়ে রোগী দেখতেন, তাহলে বিদেশমুখী রোগীরা আর যেতেন না।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, অন্যান্য ডিসিপ্লিনি এবং মেডিক্যাল বিষয়ে পড়ালেখায় বিরাট একটা পার্থক্য আছে। মেডিক্যাল কলেজে যারা ভর্তি হন তারা শুরুতেই একটা শপথ নেন, মানবসেবার। মানবসেবা করার বিরাট একটা সুযোগ স্বাস্থ্যসেবা পেশার সঙ্গে যুক্তদের ছাড়া অন্যদের করা সম্ভব নয়। এজন্য আমি তোমাদের অনুরোধ জানাব, ভালো ডাক্তার হয়ে ভালো উপার্জন করার মানসিকতা নয়, মানবসেবার মানসিকতা লালন করে মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনার জন্য।
তিনি বলেন, যারা ডাক্তার হবে, বা হয়েছো, তারা যদি সবাই সিদ্ধান্ত নেন প্রতি সপ্তাহে একদিন বিনামূল্যে রোগী দেখব, তাহলে দেশের বেশিরভাগ গরিব রোগীর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, কিন্তু সেটি খুব কম ডাক্তারই করেন। এই বিষয়গুলো ছাত্রছাত্রীদের মনের গভীরে প্রোতিত করা প্রয়োজন। একজন দরিদ্র রোগী যখন অসুস্থ স্বজনকে হাসপাতালে এসে টাকা পরিশোধের কী যে কষ্ট, সেটি আমাদের ভাবতে হবে। সেটি মাথায় রেখে যদি স্বল্প কিংবা বিনামূল্যে সেবা দেওয়া যায় তাহলে সত্যিকারের মানবতার সেবা দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল সাশ্রয়ীমূল্যে ও গরিবদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উদাহরণ তৈরি করবে আশা প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখন ডেঙ্গু নিয়েও অপপ্রচার শুরু করেছে। মনে হচ্ছে ডেঙ্গু মশার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। ডেঙ্গু মশা আওয়ামী লীগ, বিএনপি চেনে না। আমাদের সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবং জনগণের সচেতনতায় আমরা ডেঙ্গু সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারবো, যেভাবে করোনাকে মোকাবেলা করেছি।
তিনি বলেন, দুর্মূখেরা বলেন, ডেঙ্গু যেমন মারাত্মক, বিএনপি তার চেয়েও মারাত্মক। ডেঙ্গু মশা কামড়ায় আর বিএনপি মানুষ পোড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর চেয়ে বিএনপি মারাত্মক। আমরা সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। শুধু বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত দেশ রচনা নয়, আমরা বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি সামাজিক কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চাই। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্তদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি