চট্টগ্রাম: জেন্ডার একটি সাংস্কৃতিক নির্মাণ। শুধু লিঙ্গভিত্তক পরিচয়ে কেউ অসমতার শিকার হয় তেমনটা নয়।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) 'জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক ও ইহজাগতিক মূল্যবোধ' বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) এ সেমিনারের আয়োজন করে।
প্রধান আলোচক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌলা বলেন, আমাদের পারিপার্শ্বিকতাই আমাদের মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ করে। সমাজ ব্যবস্থা দুই হাজার বছর আগে কেমন ছিল, আর কিছুদিন পর কেমন থাকবে দুটোই ভিন্ন চিত্র। সমাজ গঠনকে জানতে হবে। একসময় সতীদাহ ছিল, নারী শিক্ষা ছিল না। বিদ্যাসাগর ও বেগম রোকেয়ার অবদান আমরা জানি। ভবিষ্যতের মানুষও আমাদের আজকের অবস্থান বিবেচনা করবে। তাই সবাইকে মানবিক হতে হবে।
চবি নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলা উদ্দিন বলেন, নারীর জন্য কিছু আসন সংরক্ষণ করে কি আসলে সমাজের দৃষ্টি পাল্টানো গেছে? তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কি আসলে আমরা মানুষ মনে করি? সংবিধানের শুরুর মূলনীতিগুলো থাকা জরুরি। পাশাপাশি প্রাত্যহিক জীবনে আমরা তা অনুসরণ করা সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। মেইল ডমিনেন্ট একটা সমাজে আমরা আছি। হয়তো কোনো কোনো নারী বড় পদে আছেন। জেন্ডার সমতার ধারণা কত জন ধারণ করছি সেটা দেখতে হবে।
নৃ-বিজ্ঞান সহকারী অধ্যাপক ড. মোশরেকা অদিতি হক বলেন, সমতা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চিরন্তন। আমাদের অনেক অর্জন এখনো বাকি। মুক্তিযুদ্ধের পর সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেখান থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। কিছু বিষয়ে একমত হয়ে দেশ গড়ার কাজ শুরুর যে কথা ছিল তা-ও হয়নি। কিছু প্রশ্নে এখনো বিতর্ক চলমান। নারীরা অনেকে এখন উপার্জন করছেন তবে পারিবারিক সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন কিনা সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। গার্হস্থ্য শ্রমে নারীর মূল্য নিশ্চিত করতে পারিনি।
চবি লোক প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক নওশীন ইসলাম বলেন, নারীকে পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তো প্রাধান্য দেওয়া হয় না। অর্ধেক শিক্ষার্থী নারী হওয়ার পরও তাদের সমস্যা সুবিধা নিয়ে চিন্তা নেই। নারীর প্রতি সহিংস আচরণ কমছে না। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনলাইন ভায়োলেন্স। ঘরে বাইরে সমাজে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে সবাইকে নারীর অধিকার নিশ্চিতে সক্রিয় হতে হবে।
সভাপতিত্ব করেন বিএনপিএস কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মসূচি সমন্বয়কারী মনিরুজ্জামান মুকুল। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিএনপিএস চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শরীফ চৌহান।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিএনপিএসের রুনা শাকিল আরা, এসএম এরশাদ উল করিম, তপন কান্তি, বিপ্লব দাশ, আবদুল করিম ও তানজিনা নূর।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি