চট্টগ্রাম: ভাবতেই অবাক লাগে, এক সময় যে অঞ্চলটি ছিল নেশার রাজ্য, মাদকসেবিদের প্রিয় স্থান, আজ তা হয়ে উঠেছে নন্দনকানন, সেখানে ফুটেছে ফুল। যে জায়গায় বসে নগরের সব জুয়াড়িরা এক সময় রমরমা মাদক ব্যবসার পরিকল্পনা করতো, আজ তা হয়ে উঠেছে স্বর্গোদ্যান।
বলছিলাম, সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট সাগর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এলাকার কথা। বছর দেড়েক আগেও যে এলাকাটি মাদকের সাম্রাজ্য নামে পরিচিত ছিল, সেখানে এখন পুষ্পোদ্যানে পরিণত করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
আগামী ২৫ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে ফৌজদারহাটের ওই বেড়িবাঁধ এলাকার ডিসি পার্কে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে ‘ফুল উৎসব’। উৎসবকে ঘিরে ডিসি পার্কে চলছে সাজ সাজ রব। যার কারণে, সেখান থেকে এখন মাদকের উৎকট গন্ধের পরিবর্তে সমুদ্রের সফেদ বাতাসে ভেসে আসে ফুলের সৌরভ।
জানা যায়, ফৌজদারহাট সাগর উপকূলীয় এ অঞ্চলের প্রায় ১৯৪ একর সরকারি জমি গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে দখল করে মাদক ব্যবসা ও অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলো একাধিক চক্র। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রামে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যে এসব জমি অবৈধ দখলমুক্ত করেন।
পরবর্তীতে সেখানে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় ‘ফুল উৎসব’। যা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত এক বছরে বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ হয়েছে এই ডিসি পার্কে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন কিছু স্থাপনা, শিশুদের রাইড, ওয়াকওয়ে, সানসেট ভিউ পয়েন্ট, কবুতর শেড, কিডস জোন ও বিশেষ সেলফি কর্নার।
দেশি-বিদেশি ১২৭ রকমের আকর্ষণীয় ফুলে সুসজ্জিত করা হয়েছে পুরো পার্ক। যা দেখে মুগ্ধতা ভরে উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা। অবসরে দর্শনার্থীদের এখন প্রিয় পর্যটন স্পট হয়ে উঠেছে ফুলে ফুলে সুসজ্জিত এই ডিসি পার্ক। নগরের ব্যস্ততা শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে মানুষেরা ছুটে আসেন এই পার্কে। সময়কে উদযাপন করেন মনের আনন্দে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, মাসব্যাপী এবারের ফুল উৎসবে অনেক প্রদর্শনী রয়েছে। এর মধ্যে- নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা, আর্ট প্রদর্শনী, নৌকা প্রদর্শনী, ভায়োলিন-শো, ঘুড়ি উৎসব, পিঠা উৎসব, পুতুল নাচসহ প্রতি সন্ধ্যায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দর্শনার্থীরা জনপ্রতি ৩০ টাকায় টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী ২৫ জানুয়ারি প্রধান অতিথি থেকে ফুল উৎসবের উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। এছাড়া চট্টগ্রামের দুই মন্ত্রী বিভিন্ন ইভেন্টে থাকবেন। বইমেলায় থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এই মেলা চলবে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দর্শনার্থীরা জনপ্রতি ৩০ টাকায় টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করবেন।
এই উৎসবে ১২৭ প্রজাতির ফুলের পরিচিতির বর্ণনা থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, এবারের মেলাটি গতবারের চেয়ে আরও বেশি আড়ম্বরপূর্ণ হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। যারা এটি দর্শনে আসবেন তারা অবশ্যই উপভোগ করবেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় এবারের ফুল উৎসবে ভিন্ন মাত্রা আনতে নানান পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। যারা গতবার এসেছিলেন তারা এবার আসলে পার্থক্যটা স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুসাইন মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, ডিসি পার্কে দ্বিতীয়বারের মতো ফুল উৎসবের জোর প্রস্তুতি চলছে। ডিসি স্যারের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পার্কটিকে সুসজ্জিত করতে কাজ করছি। আশা করি এবার আগের বারের চেয়েও বেশি উপভোগ করবে দর্শনার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৪
বিই/এসি/টিসি