চট্টগ্রাম: অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে অভিযোগ করেছেন বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১১ চিকিৎসক। বিষয়টি জানতে পেরে পুরোনো তারিখ (ব্যাক ডেট) ও ভুয়া স্মারক নম্বর ব্যবহার করে সিভিল সার্জনের কাছে ওই ১১ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান মজুমদার।
উপজেলা স্বাস্থ্য কপ্লেক্সের ১১ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পাল্টাপাল্টি অভিযোগের নথি এসেছে বাংলানিউজের কাছে।
বিষয়টি জানার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ভুয়া স্মারক নম্বর বসিয়ে সিভিল সার্জনের কাছে উল্টো অভিযোগ করেন। নথিতে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অভিযোগের যে চিঠি দিয়েছেন সেখানে তারিখ উল্লেখ করেছেন গত বছরের ২৭ জুলাই এবং স্মারক নম্বর উল্লেখ করেছেন উপঃ স্বাঃ কমঃ/বাঁশ/প্রশা ব্যবস্থা-২৩/৩৩২৬। হাসপাতালের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী, ওই তারিখ ও স্মারক নম্বরের চিঠিটি ছিল স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ক্যাম্পেইন সংক্রান্ত। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শফিউর রহমান নিজহাতে সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগের চিঠি জমা দেন। এনিয়ে ১৯ ডিসেম্বর ডেপুটি সিভিল সার্জনকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে সিভিল সার্জন কার্যালয়।
হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ২৭ জুলাই চিঠি দেওয়ার প্রায় ৬ মাস পর ১৯ ডিসেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করে। যা অবাক করা বিষয়। এমনকি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে ১১ চিকিৎসকের দেওয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটিরও প্রায় ৫ দিন পর সিভিল সার্জন কার্যালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউর রহমান মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, সিভিল সার্জনের কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছিলাম। এর তদন্ত চলছে। তবে হাসপাতালের নিয়মশৃঙ্খলা নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল। এখন কোনো সমস্যা নেই। আমরা সবাই এক হয়ে বাঁশখালীর মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে কাজ করছি।
ভুয়া স্মারক নম্বর বসিয়ে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কিছু প্রক্রিয়া মেনেই করা হয়েছে। চিঠিতে কোনো ভুল তথ্য নেই।
বাঁশখালী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বাংলানিউজ বলেন, আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অভিযোগের চিঠিতে উল্লেখিত স্মারক নম্বর যাচাই করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিদিন অনেক চিঠি আসে। প্রতিটি চিঠির স্মারক নম্বর চেক করা সম্ভব হয় না। চিঠির স্মারক নম্বর ভুয়া কি সত্য তা প্রমাণ করতে হলে এখন আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
কোনো অভিযোগ পাওয়ার পর কত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি বা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হয় এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াজেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমন উপলক্ষে আমরা বেশ ব্যস্ত আছি। ব্যস্ততা শেষ হলে আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।
১১ চিকিৎসকের দেওয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যেহেতু একটি অভিযোগ পেয়েছি সেটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে আমরা সব কিছু তদন্ত করে দেখবো। এমনকি যেসব চিকিৎসক অভিযোগ দিয়েছেন তাদের গত ছয় মাসের হাজিরা দেখবো। কেউ যদি দায়িত্বে অবহেলা করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে ২০২২ সালের জুনে স্বাস্থ্য অধিদফতরে আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তি নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেন বাঁশাখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
এমআর/টিসি