চট্টগ্রাম: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দরজায় কড়া নাড়ছে উপজেলা নির্বাচন। কয়েক ধাপে সম্পন্ন হবে এ নির্বাচন।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন অর্থাৎ কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হচ্ছে না। এর মানে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মধ্যেই কোনো বাধা নেই। আর সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপির উপজেলায়ও অংশ নেওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। এ কারণে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে যারা জনপ্রিয় তারাই উঠে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে সক্রিয় হয়েছেন অন্তত অর্ধডজন প্রার্থী। এগিয়ে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আনোয়ার হোসেন। তিনি উপজেলার মগধরা ইউনিয়ন থেকে পরপর দুইবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এ ছাড়া আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন মিশন, মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুননেছা চৌধুরী জেসি।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, এবারের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সন্দ্বীপে হিসাব-নিকাশ চলছে। তবে নানা সমীকরণ মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে আনোয়ার চেয়ারম্যানকেই এগিয়ে রাখছেন অনেকে।
কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সন্দ্বীপ থেকে বিজয়ী হয়েছেন মাহফুজুর রহমান মিতা। পুরো উপজেলাজুড়ে তার রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। এ কারণে ভোটের মাঠে তার সমর্থন একটি বড় ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। এরই মধ্যে মিতার ছায়া আনোয়ার চেয়ারম্যানের মাথায় রয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। আবার সন্দ্বীপে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সমুদ্র পাড়ি দিতেই হবে। এক্ষেত্রে প্রধান পথ হচ্ছে গুপ্তছড়া থেকে কুমিরা ঘাট। এখানকার ইজারাদার হচ্ছেন আনোয়ার চেয়ারম্যান। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ঘাট দিয়ে বিনামূল্যে মরদেহ পারাপারের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। মানবিক এ উদ্যোগ আনোয়ার চেয়ারম্যানকে এগিয়ে দিয়েছে অনেকাংশে।
বাউরিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. বেলাল উদ্দিন রিপন বলেন, মগধরা ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এসএম আনোয়ার। উন্নয়ন ও সেবার কারণে জনপ্রিয়তা বেড়েছে তার। করোনাকাল থেকে উপজেলায় বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা, সাড়ে ৭ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও ৫০ হাজার মাক্স ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনে বাদশা মিয়া সুকানি ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে গৃহহীনদের মাঝে ৬টি বসতঘর উপহার, আয়েশা আনোয়ারা নূরীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার তিন তলা ভবন নির্মাণ, মগধরা মোহছেনা খাতুন মাদ্রাসার দ্বিতল ভবন নির্মাণসহ নানা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহায়তা করেছেন তিনি।
উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের মেম্বার নিজাম উদ্দিন বলেন, নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন আনোয়ার চেয়ারম্যান। তার উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলেতুননেছা মুজিব আন্তঃসন্দ্বীপ গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন, প্রতিবছর ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট আয়োজন, দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে জ্যাকেট বিতরণ, প্রতিবছর মেধাবৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, সেলাই মেশিন বিতরণ, অসহায় মেয়েদের বিয়েতে আর্থিক সহযোগিতা, বিভিন্ন ইউনিয়নে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক সহায়তা, বিভিন্ন ওয়ার্ডে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন এবং রমজানে ইফতার সামগ্রী বিতরণ।
সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফোরকান উদ্দীন জানান, সন্দ্বীপের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে সবসময় দাঁড়িয়েছেন এসএম আনোয়ার। তৃণমূল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসএম আনোয়ার নিবেদিতপ্রাণ। দলের দুর্দিনে ভূমিকা রেখেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সবসময় দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। আনোয়ার চেয়ারম্যান ঘাট নেওয়ার পর থেকে সন্দ্বীপের দিনে-রাতে মানুষ পারাপারের সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন। তিনি মরদেহ বিনামূল্যে পারাপার করে দেন। এছাড়াও গরিব ও অসহায় রোগীদের ঘাটে টাকা-পয়সা ছাড় দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মগধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম আনোয়ার হোসেন বলেন, জীবনে আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। মানুষ আমাকে ভালোবেসে দুইবার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। তাদের সেই ঋণ শোধ করার মতো নয়। এবার লোকজন আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করার জন্য বলেছেন। সে হিসেবে আরও বড় পরিসরে জনসেবার জন্য আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন মিশন বলেন, আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এখনো প্রার্থী হবো কি হবো না বলতে পারছি না, দলীয় সিদ্ধান্ত আসবে। দলীয় প্রতীক ছাড়াও নির্বাচন হলেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি ও মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন, তৃণমূল থেকে ছাত্রজীবন থেকে অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে যুব রাজনীতিতে এসে সামাজিক ও মানবিক কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা অর্জন করেছি। নেতাকর্মীদের সুখে ও দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছি।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্র এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য চায়নি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়া হবে। প্রতীক ছাড়াও হলেও একজনকে দল সমর্থন দিতে পারে, যেটা অতীতে হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৪
এমআই/টিসি