চট্টগ্রাম: এমবিবিএস চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা এক বছরের জন্য হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। এর মধ্যে ১১ মাস হাসপাতালে এবং ১৫ দিন কাজ করতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে রোগীর পরিচর্যায় পালাক্রমে সেবা দিয়ে যান স্বাস্থ্যসেবার এই নেপথ্য নায়করা।
জানা গেছে, সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপের জন্য কোনো ভাতা দেওয়া হয় না। ভর্তির সময় ইন্টার্ন ফি বাবদ কেটে রাখা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে তাদের প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দাবি করেন, এক বছর দায়িত্ব পালনকালে যে ভাতা দেওয়া হয়, তা পর্যাপ্ত নয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাসপাতালে সারাক্ষণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে শত শত রোগী দেখতে হয়, তাদের তথ্য লিখতে হয়, চিকিৎসা দিতে হয়। পরদিন সকালে অধ্যাপকের জন্য নোট তৈরি করে রাখতে হয়। কাজের চাপ বেশি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সার্বিক দিক বিবেচনায় ভাতা বাড়ানো জরুরি। অনেকে ইন্টার্নশিপের সময় বিয়ে করেন। তাদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা করা দরকার।
চমেক হাসপাতালের কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো গ্রাজুয়েশন কোর্স আছে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি হলো এমবিবিএস কোর্স। সবাই চার বছরের কোর্স করে, আর এমবিবিএস পাঁচ বছরের। সেই সাথে এক বছরের ইন্টার্নসহ মোট ছয় বছর লাগে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে এক বছর আগে গ্রাজুয়েশন শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাদের হয়তো চাকরি বা বিসিএস হয়ে যাচ্ছে। সেই জায়গা থেকে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা যখন পাস করে বের হয়, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের যারা আছে, তাদের ওপর একটা চাপ থাকে। পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে হয়।
তারা আরও বলেন, চট্টগ্রামে যে হোস্টেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা থাকেন, সেটা বসবাসের উপযুক্ত নয়, তারপরও কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে। অনেকে অন্য জেলা থেকে এখানে পড়ালেখা করতে এসেছেন। একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের চলার জন্য কমপক্ষে ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে এত কম ভাতায় পরিবারকে সহযোগিতা করা বা অন্যান্য বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেওয়া কঠিন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন সম্প্রতি চট্টগ্রামে এলে তাঁর কাছে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্য খাতের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ (ইচিপ)। এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাতে দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তুলে দেন ইচিপ সভাপতি ডা. মো. ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক ডা. কনক দেবনাথ। মন্ত্রী তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন।
ইচিপ সভাপতি ডা. মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, দেশের সেকেন্ডারি কিংবা টারশিয়ারি প্রত্যেক হাসপাতালে দিন-রাত সেবা দিয়ে স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিতকরণে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত সকল পর্যায়ে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের ভূমিকা রয়েছে। রোগী গ্রহণ, প্রতিদিন তার ফলোআপ দেওয়াসহ নানান ধরনের কাজ থাকে প্রতিটি বিভাগে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা একজন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে সব কাজ করে থাকে। বর্তমান জীবনযাত্রার মান ও বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে তাল মিলিয়ে স্বল্প ভাতায় চিকিৎসক স্বয়ং ও তার পরিবারের খরচ চালানো কঠিন।
তিনি বলেন, ভাতা বৃদ্ধির জন্য এর আগেও চমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আন্দোলন করেছে। কিন্তু ফলপ্রসূ হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে ভাতা বৃদ্ধির আবেদন জানানো হয়েছে।
বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত একাধিক ইন্টার্ন চিকিৎসক জানান, ভর্তির সময় শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা তদূর্ধ্ব ইন্টার্ন ফি নেওয়া হয়। ইন্টার্নশিপের সময় সেখান থেকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। অনুমতি ছাড়া বা ১৫ দিনের অতিরিক্ত ছুটি কাটালে দৈনিক হিসেবে ভাতার টাকা কাটা হয়।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে ২০ হাজার করার কথা ছিল গত অক্টোবর মাসে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবনা পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তবে অর্থ বিভাগের অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
ইন্টার্নদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই চিকিৎসকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে, যাতে পুরো সময়টা হাসপাতালে মনোযোগী হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪
এসি/টিসি