ঢাকা, শুক্রবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বেড়েছে শুল্কহার, প্রভাব ফলের বাজারে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
বেড়েছে শুল্কহার, প্রভাব ফলের বাজারে ...

চট্টগ্রাম: রমজানে ফলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তাই বিদেশি ফল আমদানি বন্ধ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

ভোক্তা অধিকারের মতে, বিদেশ থেকে আমদানি করা ড্রাগন, রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো ও রকমেলন এর মতো দামি ফল সুপারশপ এবং অভিজাত এলাকার ফলের দোকানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে দেশি ফলের বাজারে। পাশাপাশি আপেল, আঙ্গুর ও কমলার মতো বিদেশি ফলের দামও বাড়ছে।

একই সঙ্গে বিদেশি ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো পরিবর্তন করা দরকার। তবে রমজানে প্রয়োজনীয় পাঁচটি ফল খেজুর, মাল্টা, আপেল, কমলা ও আঙ্গুর আমদানি করা প্রয়োজন।

ঋণপত্র খোলায় জটিলতা, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও শুল্ক বাড়ানোর কারণে বিদেশ থেকে ফল আমদানি কমে যাওয়ায় বাড়ছে দাম। বছরের ব্যবধানে কমলা, মাল্টা, আঙুর ও আপেলের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত।  

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য মতে, দেশের সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, ভুটান, মিসর, ব্রাজিল, তিউনিশিয়া, আর্জেন্টিনা, তুরস্ক, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফ্রান্স থেকে ফল আমদানি করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে তিন লাখ ৭৮ হাজার টন ফল আমদানি করা হয়। ২০২৪ সালে দুই মাসে ৬৪ হাজার ৩১২ মেট্রিক টন ফল আমদানি হয়েছে। যার মধ্যে তাজা ফল ৫০ হাজার ১৮১ মেট্রিক টন, শুকনো ফল ১ হাজার ৯৪৬ মেট্রিক টন। খেজুর আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ১৮৫ টন। ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে ফল আমদানি কমেছে প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন।

বিদেশি ফল আমদানিকারকরা জানান, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানি করা বিদেশি ফলের ওপর শুল্কহার বাড়িয়েছে। আগে প্রতি কেজি আপেল, কমলা এবং মাল্টায় ৬২ টাকা শুল্ক আদায় করলেও এখন তা নেওয়া হচ্ছে ৮৮ টাকা। একইভাবে ৯৮ টাকার আঙুরের শুল্কহার ১১৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খুলতে চায় না ব্যাংকগুলো। সঙ্গে আছে অন্যান্য ভ্যাট ও কর।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তৌহিদুল আলম বলেন, শুল্ক হার বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকরা বিদেশি ফল আমদানিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

এদিকে রোজার অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। বর্তমানে খেজুর আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ। রমজানকে সামনে রেখে তা কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। খেজুর আমদানিকারকরা ১০ শতাংশ কম শুল্কে আমদানির সুবিধা পাবেন ৩০ মার্চ পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপ-কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, রোজার আগে বাজার সহনীয় রাখতে খেজুরে শুল্ক কর ১০ শতাংশ কমিয়েছে সরকার।

আমদানিকারকরা জানান, বাংলাদেশে যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হয় তা দৈনিক মোট চাহিদার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। এক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ফলের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফলের ওপরই নির্ভর করতে হয়। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিদেশি ফলের চাহিদা বেড়ে যায়। কারণ, এ সময় দেশিয় ফলের সরবরাহ কম থাকে। আবার মার্চে রোজার সময় ফলমূলের চাহিদা আরও বেড়ে যায়।

সম্প্রতি আমদানি করা চীনা কমলা এখন ফলের বাজারে বেশ বিক্রি হচ্ছে। কিছু কমলা পাওয়া যাচ্ছে পাতাসহ। প্রতি ১৫ কেজির কার্টন ১৭শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২শ টাকায়। খুচরায় বিক্রি হয় প্রতিকেজি ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা।

চট্টগ্রাম বিআরটিসি ফলমন্ডির জিএস ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম উদ্দিন জানান, আগে চীনা কমলা আসতো কার্টনে প্লাস্টিক নেট দিয়ে জড়িয়ে। এখন আমাদের চাহিদা অনুসারে পাতাসহ কমলা আসছে বিশেষ প্যাকেজিংয়ে সবুজ পাতা মোড়ানো অবস্থায় ১৫ কেজির কার্টনে। কন্টেইনারে আছে তাপমাত্রা সংরক্ষণ ব্যবস্থা। চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ১৫ দিন।

এছাড়া পাইকারিতে মাল্টা প্রতিকেজি ২৩০ টাকা, খুচরায় ২৫০ টাকা, আঙ্গুর পাইকারিতে ২৬৫ টাকা, খুচরায় ২৮০ টাকা, আপেল পাইকারিতে ২৬০ টাকা, খুচরায় ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।