চট্টগ্রাম: এবার ঈদ যাত্রায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০০টি ইঞ্জিন।
আগামী ৩ এপ্রিল ঈদযাত্রা শুরুর আগেই এসব কোচ ও ইঞ্জিন সংস্কার শেষে যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত করা হবে। ইতোমধ্যে বেশকিছু ইঞ্জিন ও কোচ পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে মেরামত শেষে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কোচ ও ইঞ্জিন সংস্কার করা হয় নগরের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে। এবার এই ওয়ার্কশপে ঈদযাত্রার জন্য ৯৫টি মিটারগেজ কোচ প্রস্তুত করে ঈদযাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জন্য প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে ১০০টি লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন। গত বছর ঈদের সময় ৯০টি কোচ মেরামত করে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছিল। এ বছর কোচের সংখ্যা পাঁচটি বেড়েছে। টিকিটের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোচ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে। এ ছাড়া এবার আন্তঃনগর ট্রেনে ২৫ শতাংশ সিটবিহীন টিকিট বিক্রি করা হবে। সাধারণত প্রতিটি ট্রেনে ১৪-১৬টি বগি থাকে। প্রতি বগিতে সিট থাকে ৫৫ থেকে ৬০টি। ঈদে প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি যুক্ত করা হয়। প্রতি ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করা হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ জন।
ঈদ উপলক্ষে এবার ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুই জোড়া, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ ও দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে এক জোড়া করে বিশেষ ট্রেন ৫ এপ্রিল শুরু হয়ে ঈদের পরের পাঁচদিন পর্যন্ত চলাচল করবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে এক জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে ৮ ও ৯ এপ্রিল এবং ঈদের পর তিনদিন। জয়দেবপুর থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত এক জোড়া বিশেষ ট্রেন ৭, ৮ ও ৯ এপ্রিল এবং ঈদের পর তিনদিন চলবে। ঈদযাত্রার এ সময় সব আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ বাতিল করা হয়েছে।
পুরোনো কোচ ও ইঞ্জিন মেরামত করে ট্রেন পরিচালনা করলে শিডিউল বিপর্যয়, মাঝপথে ইঞ্জিন বিকলসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হয় যাত্রীরা। এবার এসব সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিয়েছে পরিকল্পনা।
মনিটরিং সেল গঠন
এবার ঈদ যাত্রায় ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখা ও শিডিউল বিপর্যয় নিরসনে পৃথক মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও ট্রেন শিডিউল পেট্রোলিং
সময়ানুবর্তিতা রক্ষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও জংশন স্টেশন এবং সিগন্যাল কেবিনে কর্মকর্তা, পরিদর্শকদের তদারকির মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনা করা হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও ট্রেন শিডিউল বজায় রাখার স্বার্থে রেলপথ পেট্রোলিং এর ব্যবস্থা করা হবে। রেল ব্রিজসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রিলিফ ট্রেন প্রস্তুত
সিগনালিং ব্যবস্থা, কোচ এবং ইঞ্জিনের নিবিড় পরিচর্যা ও পরীক্ষা সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে দুর্ঘটনাস্থলে প্রেরণের লক্ষ্যে রিলিফ ট্রেন সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনা নিশ্চিত করে যাত্রীসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সময়ানুবর্তিতা রক্ষার জন্য ডিভিশনাল ও জোনাল কন্ট্রোলে পৃথক মনিটরিং সেল গঠন করে কর্মকর্তাদের ইমার্জেন্সি ডিউটি প্রদান করা হবে। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করবেন।
রেলওয়ে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের তত্ত্বাবধায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, প্রতিবছর ঈদে পুরাতন কোচ মেরামত করে নতুনরূপে সাজানো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। মেরামত করে এবার ৯৫টি কোচ যুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে ৬৮টি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো শিগগির বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যাত্রীদের সঠিক সময়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ঈদে যাত্রীরা বাড়ি যেতে ট্রেনকে নিরাপদ বাহন হিসেবে মনে করে। আমরাও যাত্রীদের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
বিই/এসি/টিসি