চট্টগ্রাম: সরকারি কর্মকর্তা হয়েও নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। লোহাগাড়ায় নিজ এলাকায় চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর হয়ে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন ছেলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ও কমপ্লেক্সের সহকারী পরিচালক মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী।
সম্প্রতি এনিয়ে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ জমা দেন প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী খোরশেদ আলম চৌধুরী।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ২২ মে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত লোহাগাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১৫৭টি মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের নিয়ে গোপন বৈঠক করেন ইকবাল বাহার চৌধুরী।
যা সরকারী চাকুরী বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর তারিখের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী (২০ মার্চ, ২০২৪) সর্বশেষ সংশোধনীসহ মুদ্রিতউপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ২২ নম্বর ধারার ১ নম্বর ও ২ নম্বর উপ-ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, বাবা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এ চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার পর গত ১৪ মে তিনি হঠাৎ চট্টগ্রামে বদলী হয়ে এসে যোগদানের এক সপ্তাহের মধ্যেই গত ২২ মে কোনো অফিস আদেশ ছাড়াই লোহাগাড়ায় স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোহাগাড়া উপজেলার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। অযাচিত হস্তক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডে সরকারী চাকুরী বিধিমালা লঙ্ঘন। উপজেলা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে তাকে যথাযথ শাস্তি ও তাৎক্ষণিক বদলীর দাবিও জানান ওই প্রার্থী।
এদিকে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ও কমপ্লেক্সর সহকারী পরিচালক ইকবাল বাহার চৌধুরী বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল (শুক্রবার) এডিএম স্যারের পিএ চিঠি পাঠিয়েছে, সেটা প্রথম দেখলাম। আমি সরকারি চাকরিজীবী, নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ গ্রহণের প্রশ্ন আসে না।
তিনি বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করি। আমি আগেও লোহাগাড়ার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। গত ২১ মে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ও কমপ্লেক্সে জয়েন করেছি। আমি কোন প্রচারণায় নেই।
ইকবাল বাহার প্রচারণার বিষয়টি অস্বীকার করলেও মসজিদে বসে বৈঠক এবং প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার ছবি ও ভিডিও এসেছে বাংলানিউজের হাতে।
এমনকি ২২ মে অনুষ্ঠিত হওয়া বৈঠকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক ইকবাল বাহার চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়টি বাংলানিউজকে স্বীকার করেছেন লোহাগাড়া মডেল মসজিদের কেয়ারটেকার মো. রাশেদুল হক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোহাগাড়ার সুপারভাইজার আবু বকর রফিক।
বৈঠকের বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোহাগাড়ার সুপারভাইজার আবু বকর রফিক বাংলানিউজকে বলেন, কলাউজান থেকে আসার সময় আমাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী স্যারের সঙ্গে আমাদের সৌজন্য স্বাক্ষাত হয়েছে। এর বাইরে আমার কোন বক্তব্য নেই।
সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণের বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক বোরহান উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আহসান বাংলানিউজকে বলেন, মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্রের ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করার এখতিয়ার নেই। গত এক সপ্তাহ আমি ঢাকায় ছিলাম। আমি এখনো অভিযোগটি পায়নি। যদি কেউ এমন কাজ করে থাকে তাহলে সরকারী চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লোহাগাড়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ ইনামুল হাছান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে সকালে-বিকাল একাধিক অভিযোগ দিচ্ছেন প্রার্থীরা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ও কমপ্লেক্সের সহকারী পরিচালক মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী নির্বাচনে প্রচারণার বিষয়ে একটি অনুলিপি পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা ইসলামি ফাউন্ডেশনে চিঠি দিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, জুন ০২ , ২০২৪
এমআই/টিসি