চট্টগ্রাম: মীরসরাইয়ে হাসপাতালে জন্ম নেওয়া এক নবজাতককে মৃত ঘোষণার পর কবর দেওয়ার আগে কেঁদে উঠে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অবহেলাকেই দায়ি করছেন শিশুর বাবা ইউনুস আলী।
শনিবার (০১ মে) রাতে উপজেলার ১০ নম্বর মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির কবরস্থানে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, পূর্ব মিঠানালা গ্রামের ইউনুস আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তারের প্রসব ব্যথা ও রক্তক্ষরণ হলে শনিবার সকালে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত গাইনি চিকিৎসক ডা. শারমিন আয়েশা পরীক্ষা করে রোগীকে স্যালাইন দেওয়ার নির্দেশ দেন। বিকেলে আলট্রাসনোগ্রাফি করে জানান, গর্ভস্থ শিশু মারা গেছে। এদিন রাত পৌনে ৯টার দিকে প্রসব করানোর পর নবজাতককে মৃত ঘোষণা করলে একটি কার্টনে ঢুকিয়ে বাড়িতে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।
শিশুর বাবা ইউনুস আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে কার্টনে করে ৫ মাস ১৯ দিন বয়সী বাচ্চাকে দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই। এরমধ্যে কবর খোঁড়াও হয়ে গেছে। পরে কবর দেওয়ার জন্য কার্টন খুলে দেখি- বাচ্চা কান্না করছে। এ অবস্থায় দ্রুত মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রাত দেড়টার দিকে নবজাতককে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ অবস্থার জন্য ডা. শারমিন আয়েশা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী’।
এ বিষয়ে জানতে ডা. শারমিন আয়েশার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বলছেন, ‘প্রসবের পর বাচ্চার ১ মিনিট নড়াচড়া ছিল। ১৫ মিনিট চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা সেখানে আসে। নবজাতককে মৃত ঘোষণা করলে আমরা ডেথ সার্টিফিকেট দিতাম। আমাদের অজান্তে তারা বাচ্চাকে বাড়ি নিয়ে যায়’।
মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, সাধারণত ৫-৬ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে বাঁচার কথা নয়। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রথম ১৯৮২ সালে এ ধরনের ঘটনার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। এরপর ১৯৯৩ সালে এ ঘটনাকে ‘ল্যাজারাস সিনড্রোম’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। দুটি তত্ত্বকেই এই সিনড্রোমের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
এর মধ্যে একটি হচ্ছে সিপিআর দেওয়া। কোন রোগীকে জরুরি অবস্থায় হাসপাতালে আনার পর তাকে সিপিআর বা কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন দেওয়া হয়। এতে ওই মুহূর্তে মনে হয় যে, ওই ব্যক্তি মৃত। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তার ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাক্টিভিটিস, হৃদপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু হয়ে গিয়ে ওই ব্যক্তি জেগে উঠতে পারে। আবার মনে করা হয় যে, যখন সিপিআর দেওয়া হয় তখন ফুসফুসে অনেক বাতাস জমে। সেটি বের হতে পারে না। কিন্তু সিপিআর দেওয়া শেষ হয়ে গেলে বাতাস বের হতে থাকে এবং রক্ত সঞ্চালন শুরু হয়।
দ্বিতীয়ত- মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে যে ইনজেকশন দেওয়া হয়, সেটি হয়তো তাৎক্ষণিক কাজ করে না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হয়তো সেটি কাজ করা শুরু করে এবং হৃদযন্ত্র চালু হয়ে যায়। এতে ওই ব্যক্তির মধ্যে অনুভূতি ফিরে আসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২৪
এসি/টিসি