চট্টগ্রাম: বিশাল কালো গরুটি অন্য গরুর চেয়ে শান্ত। তাই শিশু-কিশোরদের ভিড় লেগে আছে।
নগরের প্রাচীনতম পশুর হাট ষোলশহর-মুরাদপুরের বিবিরহাটের চিত্র এটি। দূরদূরান্ত থেকে বেপারীরা আসতে শুরু করেছেন। সঙ্গে ট্রাকে করে নিয়ে আসছেন ছোট-বড় গরু, গোখাদ্যসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। কারণ তারা গরু বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত কয়েক সপ্তাহ হাটেই সংসার পাতবেন। রান্না, খাওয়া, মাচায় থাকা সবই হাটে। ইতিমধ্যে কেউ কেউ রান্না বসিয়েছেন গরুর জন্য, নিজের জন্য। কেউবা আবার যাত্রাপথের ক্লান্তি ছাড়াতে শুয়ে আছেন এক লাইনে।
মূল গেট দিয়ে ঢুকতেই হাতের ডান পাশের প্যান্ডেল তৈরি হয়ে গেছে। সেখানে দুই-তিনশ’ গরু নিয়ে অলস সময় পার করছেন বেপারীরা। বাম পাশের প্যান্ডেলের জন্য বাঁশ টাঙানোর কাজ করছেন শ্রমিকরা। কিছু শ্রমিক বৈদ্যুতিক বাতি লাগাচ্ছেন। সিএমপি পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।
জায়েদ আলী ১৯৯৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম আসেন কোরবানির গরু নিয়ে। তিনি জানান, এবার চাঁপাই থেকে ২১টি নিজেদের পালা গরু নিয়ে এসেছি বিবিরহাটে। ট্রাকভাড়া নিয়েছে ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা। ট্রাকে করে গরুর খাবার, নিজের খাবার, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ সব নিয়ে এসেছি। শুধু অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলটা কিনেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাড়ে ৩ লাখ টাকা হাঁকানো গরুটি নিয়ে এসেছেন মোহাম্মদ হাকিম (৬৫)। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চুয়াডাঙ্গা থেকে ১৬টি গরু এনেছিলাম। ১২টি বেচে ফেলেছি। চারটি আছে। এর মধ্যে কালো গরুটি সাড়ে তিন লাখ টাকা চেয়েছি। দুই লাখ, আড়াই লাখ টাকা দর উঠেছে।
মোহাম্মদ শামিম (২৮) বেপারী চার বছর ধরে বিবিরহাটে আসেন কোরবানির গরু বেচতে। তিনি জানান, এবার ৭ জন মিলে চাঁপাই থেকে দুইটি ট্রাকে ৪২টি গরু এনেছেন। প্রতিটি ট্রাকের ভাড়া ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। গত বছর ৪০টি গরু এনেছিলেন।
শামিম বলেন, কয়েক সপ্তাহের জন্য আমাদের বাসাবাড়ি এ হাট। এখানেই থাকবো, খাবো, ঘুমাবো। এতে গরুর যত্ন নেওয়া যেমন সহজ হবে তেমনি বেচাবিক্রির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পার্টনাররা মিলে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) এ স্থায়ী পশুর হাটটি এবারও ইজারা হয়নি। বাধ্য হয়ে খাস কালেকশনে নেমেছে চসিক। বেপারীদের কাছ থেকে খুঁটি হিসেবে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ২০টি খুঁটি প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এর বাইরে কোরবানি দাতা গরু কেনার টাকার ওপর হাসিল দেবেন চসিককে।
বেপারীরা জানান, গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, মাত্রাতিরিক্ত গরম, ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ নানা কারণে এবার গরু, মহিষ ও ছাগলের দাম গতবছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। গত বছর যে গরু এক লাখ টাকা ছিল এবার তার দাম সোয়া লাখ হতে পারে। মোবাইল ব্যাংকিং ছোট ছোট লেনদেনের জন্য সহায়ক হলেও বড় অঙ্কের লেনদেন ব্যাংক হিসাবেই সারছেন তারা। প্রতিদিন গরু বিক্রির টাকা ব্যাংক হিসাবেই জমা করে দেন যত দ্রুত সম্ভব।
গরু ছাড়াও ছাগল, ভেড়ার জন্য মোটামুটি প্রসিদ্ধ বিবিরহাট। ইতিমধ্যে প্রচুর ছাগল বাজারে এনেছেন বেপারী ও গৃহস্থরা। দরকষাকষির মাধ্যমে কিনছেন অনেকে।
প্রণব রায় জানান, তার বাড়ি চট্টগ্রামে। কিন্তু ১২টি ছাগল নিয়ে এসেছেন নাটোর থেকে। এগুলো বিক্রি হয়ে গেলে আবার আনবেন।
চসিকের স্টাফ পরিচয় দিয়ে আবদুর রাজ্জাক বাবু বাংলানিউজকে জানান, ইজারা না হওয়ায় গত বছরের মতো খাস কালেকশনের মাধ্যমে বিবিরহাট পরিচালিত হচ্ছে। চসিকের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেপারীরা আসতে শুরু করেছেন। আশাকরি, কয়েকদিন পরই জমজমাট বেচাকেনা হবে বিবিরহাটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৪
এআর/পিডি/টিসি