চট্টগ্রাম: দুই বন্ধু মো. শাহেদ ও মো. ইকবাল। গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল কুতুবপাড়া এলাকায়।
শাহেদ চাকরি নেন রিয়াজউদ্দিন বাজারের আজওয়ার টেলিকমে। ইকবালের চাকরি শহরের অন্য জায়গায়। শুক্রবার মার্কেট বন্ধ হলে বৃহস্পতিবার রাতেই দুই বন্ধু একত্রিত হন। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তাদের মৃত্যুও হলো একসঙ্গে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রিয়াজউদ্দিন বাজারে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুন মূহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে মোহাম্মদীয়া মার্কেট। এ সময় কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে শাহেদ ফোন করেন দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়াকে। তখন সময় রাত পৌণে ২টা। ফোন পেয়েই দোকান মালিক শাহেদকে নির্দেশনা দেন- সে যেন সিঁড়ি বেয়ে ছাদের উপরে উঠে যায়। কিন্তু ধোঁয়ায় চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যায় শাহেদের। সবদিকে অন্ধকার। পরে আবারও ফোন দেন শাহেদ। তখন সাজ্জাদ পরামর্শ দেন-চোখে মুখে কাপড় মুড়িয়ে হলেও যেন ছাদে দৌড়ে চলে যায়। কিন্তু নিরুপায় শাহেদ। নিজেকে বাঁচাতে হামাগুড়ি দিয়ে খুঁজে নেন টয়লেট। সেখান থেকে মালিককে ফোন দিয়ে জানান- ‘আমি টয়লেটে। আমার জন্য দোয়া করবেন’। কালেমা পড়তে পড়তে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন শাহেদ।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটিতে গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়ায় চলে গিয়েছিলেন দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়া। আগুন লাগার খবর পেয়ে মোটরসাইকেলে ছুটে আসেন রিয়াজুদ্দিন বাজারে। ততক্ষণে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।
ধোঁয়ার কারণে ভেতরে ঢুকতে পারেননি সাজ্জাদ মিয়া। অন্য ভবনের ২য় তলা দিয়ে মার্কেটে প্রবেশ করেন তিনি। দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখেন- টয়লেটে পড়ে আছে শাহেদের নিথর দেহ। সেখান থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজওয়ার টেলিকমের মালিক সাজ্জাদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, যখন আমি তার ফোন পেয়েছি সঙ্গে সঙ্গে আমার নির্দেশনা ছিল- সে যেন ছাদে চলে আসে। দোকানের সব গলিই তার মুখস্থ। চোখ বন্ধ করেও সে ছাদে চলে আসতে পারবে- এমন ধারণা ছিল আমার। কিন্তু পরে আমি সাতকানিয়া থেকে ছুটে এসে দেখলাম, ধোঁয়ার কারণে হাঁটাচলা তো দূরের কথা চোখের জ্বালা যন্ত্রণায় টিকে থাকাটায় দায় হয়ে গেছে৷ চোখেমুখে কাপড় মুড়িয়ে দোকানের ভেতরে গিয়ে দেখি, সে টয়লেটের মধ্যে পড়ে আছে। সর্বশেষ যখন আমার সঙ্গে কথা হয় তখন সে শুধু কালেমা পড়ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৪
বিই/এসি/টিসি