চট্টগ্রাম: সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখে দিয়ে এবং সব ষড়যন্ত্র ভেদ করে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি।
রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৪টায় নগরের প্রবর্তক মোড়ে ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের উদ্যোগে আয়োজিত রথযাত্রায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে এবং আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করেছে। একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে জন্মলাভ করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এদেশে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সবাই মিলে একাকার হয়ে যেভাবে আমাদের পূর্বসূরিরা মুক্তিযুদ্ধ করেছে একইভাবে আমরা হাতে হাত রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব সম্প্রদায়ের মানুষ বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। দেশকে স্বপ্নের ঠিকানায় নিয়ে যাবো, এটিই হোক আমাদের আজকের প্রত্যয়। প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে সব ধর্ম পথ মতের মানুষ যেন তাদের ধর্মীয় উৎসব, ধর্মীয় আয়োজনগুলো নির্বিঘ্ন করতে পারে। চট্টগ্রামের প্রশাসনও সেই কাজটি করে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়র, সাবেক মেয়র, সংসদ সদস্যবৃন্দ ও আমি আপনাদের উৎসবে শামিল হয়েছি। এটিই অসম্প্রাদায়িক বাংলাদেশ এবং এটিই আমাদের অস্তিত্ব এবং বন্ধন।
রথযাত্রা উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী। উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রধান আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ আলোচক ছিলেন শ্রীশ্রী পুন্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক দারু ব্রহ্ম জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী। ঐক্যবদ্ধ সনাতন সমাজের সমন্বয়ক সাংবাদিক বিপ্লব পার্থের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য শিক্ষাবিদ ড. জিনোবোধি ভিক্ষু, বাংলাদেশ জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, রাঙ্গুনীয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শেখর বিশ্বাস, কাউন্সিলর মোরশেদ আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ আচার্য্য, স্বামী অদ্বৈতানন্দ যোগাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমৎ স্বামী অক্ষরানন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীশ্রী শ্মশান কালী মাতৃ সেবাশ্রম ও গীতা শিক্ষা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ স্বামী পরিতোষানন্দ গিরি মহারাজ, কৈবল্যধামের ট্রাস্টি মনিলাল দাশ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আশুতোষ মহাজন, সনাতনী জাগরণ সংঘের সভাপতি কাঞ্চন আচার্য্য, সংগঠক ডা. যীশুময় দেব, রাঙ্গুনীয়া উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রণব কুমার দে, অ্যাডভোকেট শৈবাল শীল, মিলন শর্মা, সুমন সরকার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর উপ কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মিঠুন বিশ্বাস, জাগো হিন্দু পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি রুবেল কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক টিটু শীল, শারদাঞ্জলি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক লিংকন তালুকদার, যুব সংগঠক অজয় দত্ত, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা পরিষদের সদস্য অর্পণ চক্রবর্তী, জুয়েল আইচ, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সদস্য সচিব প্রকৌশলী রুবেল দাশ, অভিরাজ নাথ প্রমুখ।
ভোরে মঙ্গলারতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার শুভ সূচনা হয়। বিকাল ৫টায় রথযাত্রার বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রা প্রবর্তক মোড় থেকে শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিনেমা প্যালেস প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের অংশগ্রহণের পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন নামহট্ট, ভক্তিবৃক্ষ, ইয়ুথ ফোরাম, গীতা প্রচার বিভাগ, জাগ্রত ছাত্র সমাজ, সংর্কীতন, ফুড ফর লাইফ, নিত্যসেবা, সনাতন বিদ্যার্থি সংসদ, জাগো হিন্দু পরিষদ, শারদাঞ্জলি ফোরাম, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, রাধা বিনোধ, ভ্রাম্যমাণ গীতা প্রচার সংঘ, ঋষি মতিলাল স্মৃতি সংসদ, বিশ্ব সনাতন ঐক্য, জাতীয় হিন্দু মহাজোট, সনাতন সংগঠন, ইউএসটিসি, মেডিকেল সার্ভিস টিম, বাংলাদেশ সনাতনী গণ জাগরণ মঞ্চ, কোজাগরী পূর্ণিমা উদযাপন পরিষদ, শারদাঞ্জলী ফোরাম সহ ১৭ টির অধিক বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক বিভিন্ন পৌরাণিক সাজসহ অংশগ্রহণ করেন। মহাশোভাযাত্রায় প্রায় লক্ষাধিক ভক্ত সংকীর্তনে নগরের রাজপথ পরিভ্রমণ করেন। অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল মঙ্গলারতি, গুরুপূজা, ভাগবত পাঠ, বিশ্ববাসীর কল্যাণার্থে শ্রীজগন্নাথের সন্তুষ্টি বিধানার্থে ১০টি অগ্নিহোত্র বৈদিক যজ্ঞ, মঞ্চে ভজন কীর্তন, ভোগারতি, সংকীর্তন। এতে প্রায় পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক ভক্তের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। নগরের মোড়ে মোড়ে নগরবাসীগণ উলু ধ্বনি, শঙ্খ ধ্বনি, মঙ্গল প্রদীপ পূজার নৈবেদ্য সহকারে জগন্নাথ-বলদেব-সুভদ্রা মহারাণীকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানান। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন পৌরাণিক সাজের মাধ্যমে আবহমান বাংলার ও বৈদিক সংস্কৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৪
এআর/পিডি/টিসি