চট্টগ্রাম: কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনের অংশ হিসেবে সমন্বয়কদের আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছে আন্দোলনকারীরা।
বুধবার (৩১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় নগরের কোতোয়ালী থানাধীন লালদীঘির পাড় এলাকার জেলা পরিষদ ভবনের সামনের সড়কে আন্দোলন শুরু করে তারা।
সরেজমিন দেখা যায়, জেলা পরিষদ ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
পরে আইনজীবী ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেয় শিক্ষার্থী ও তাদের সমর্থক আইনজীবীরা।
ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আ স ম মাহতাব উদ্দিন, কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) অতনু চক্রবর্তী, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সরাসরি বিক্ষোভ অংশ না নিলেও বিএনপিপন্থী আইনজীবী হিসেবে পরিচিত আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে অবস্থান নেন।
অপরদিকে আন্দোলনের বিপক্ষে মিছিল বের করেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। মহানগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে আইনজীবী ভবনের দিকে আসে। এসময় দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আদালত ভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে আইনজীবী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কারও স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা দিতে আসিনি। আদালত ভবনে দুইশ বছরের পুরনো অনেক নথি রয়েছে যা, সুরক্ষার জন্য আমরা সচেষ্ট থাকবে।
আদালতে বিচারপ্রার্থীদের প্রবেশে বাধা
দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে আদালতে প্রবেশে বিচারপ্রার্থীদের বাধা দেওয়া অভিযোগ করছেন অনেকে। জানে আলম নামে আনোয়ারা থেকে আসা এক বিচার প্রার্থী বাংলানিউজকে বলেন, আদালতে মামলা করতে এসেছিলাম। নথিপত্র সব প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু এ আন্দোলনের কারণে আদালতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে ৯ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চার ঘণ্টার অবস্থান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে চার ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকাল সোয়া ১১টা থেকে সোয়া ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটক বদিউল আলম স্মারক ব্রিজের নিচে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন। কয়েক দফায় বৃষ্টি হলেও শিক্ষার্থীরা তাঁদের অবস্থান থেকে সরে যাননি। ওই সময় নগর ও জেলার বিভিন্ন থানা এবং কারাগার থেকে কোনো আসামিকে আনা–নেওয়া করা যায়নি। তবে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান ছিল। শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। বিকেল সোয়া তিনটার দিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে নগরের নিউমার্কেট মোড়ে এসে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এ এন এম হুমায়ুন জানান, আমাদের কাছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতে ফিরে যেতে পারেন সেই দাবি জানান। আমাদের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করার পর শিক্ষার্থীরা সরে যান। কোনো ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৪
এমআই/এমআর/টিসি