চট্টগ্রাম: কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় চট্টগ্রামে পুলিশের করা বিস্ফোরক আইনের মামলার জব্দ তালিকায় বিস্ফোরকের কোনো উপাদান নেই। মামলার এজাহারে ককটেল বিস্ফোরণে আহত কারও কথাও বলা হয়নি।
গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নগরের মুরাদপুরে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় পৃথক দুটি মামলা হয় পরদিন।
ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলার বাদী পাঁচলাইশ থানার এসআই দীপক দেওয়ান। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ১৬ জুলাই বিকেল ৩ টা ১৫ মিনিটে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা ও ছাত্রলীগ যুবলীগ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে পুলিশ। অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছুড়ে মারে। দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ছাত্রলীগ কর্মী ও কোটা বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী একটি ভবনের উপরে উঠে। সেখানে তাদের ধাওয়া দিলে পাইপ বেয়ে নিচে নামতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। তবে বিস্ফোরণে কেউ আহত হয়েছেন কিনা এজাহারে বলা হয়নি।
এজাহারে আরও বলা হয়, পরিস্থিতি শান্ত হলে ঘটনার দিন বিকেল ৫ টা ১০ মিনিটে মামলার বাদী এসআই দীপক দেওয়ান তার থানার দুই কনস্টেবল দেবাশীষ বড়ুয়া ও খোকন দাশকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে জব্দ তালিকা তৈরি করেন। ওই সময় তিনজন স্থানীয় ব্যক্তিকেও জব্দ তালিকায় সাক্ষী হিসেবে রাখেন। তালিকায় বলা হয়, ঘটনাস্থল থেকে সাতটি বিভিন্ন সাইজের কাঠের লাঠি, দশটি ইটের টুকরো, পাঁচটি পাথরের টুকরো, চারটি বিভিন্ন সাইজের লোহার রড ও ছয়টি বিভিন্ন সাইজের এসএস পাইপ। গত বুধবার পর্যন্ত মামলার নথিতে জব্দ তালিকায় আলামত হিসেবে এগুলো রয়েছে। মামলাটি তদন্ত চললেও ১৫ দিনে নতুন কোনো আলামত যুক্ত হয়নি। মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৪০ জন।
ঘটনার দুই ঘণ্টার মধ্যে আলামত সংগ্রহ করা হলেও বিস্ফোরক মামলায় বিস্ফোরকের কোনো উপাদান ঘটনাস্থলে কেন পাওয়া যায়নি জানতে চাইলে মামলার বাদী ও জব্দ তালিকা তৈরিকারী পাঁচলাইশ থানার এসআই দীপক দেওয়ান বলেন, ওই সময় পায়নি। যেগুলো পেয়েছি ওগুলো আলামত হিসেবে জব্দ করেছি। এর বেশি কিছু বলতে চাননি বাদী পুলিশ কর্মকর্তা।
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটে কাজ করা ও নগর পুলিশের পাঁচ পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ককটেল বিস্ফোরণ হলে স্প্লিন্টারের টুকরো, কোটা বেশি দূরে যাওয়ার সুযোগ নেই। যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে তার আশপাশে আলামত থাকার কথা।
পুলিশের করা জব্দ তালিকার তিন সাক্ষীর মধ্যে দুজনের সঙ্গে কথা হয়। আরেকজনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। সাক্ষী মুরাদপুর এলাকার চা-বিক্রেতা মো. শামীম বলেন, ‘বিস্ফোরণ হয়েছে কিনা আমি জানি না। পুলিশ নাম-ঠিকানা চেয়েছে দিয়েছি’। আরেক সাক্ষী ফল বিক্রেতা আনোয়ার হোসেনও জানিয়েছেন ঘটনার সময় তিনি বাসায় ঘুমে ছিলেন।
ঘটনার দিন ১৬ জুলাই বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী ও আশপাশে শতাধিকের বেশি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। মুরাদপুর এলাকার কমপক্ষে ১২ জনের সঙ্গে কথা হয়। তারা কেউ ককটেল বিস্ফোরণ হতে দেখেননি।
বিস্ফোরক মামলার আলামতে বিস্ফোরকের কোনো উপাদান আলামত হিসেবে না থাকাকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মো. আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, এতে মামলা দুর্বল হয়ে যাবে। বিস্ফোরক মামলা প্রমাণ করতে হলে আলামত পরীক্ষায় বিস্ফোরক পেতে হবে। অথবা চিকিৎসকের সনদে বলতে হবে আহত ব্যক্তি ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৪
এমআর/এমআই/পিডি/টিসি