ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ইউএনও’র প্রচেষ্টায় দুর্গম পাহাড়ে উচ্চ বিদ্যালয়

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪
ইউএনও’র প্রচেষ্টায় দুর্গম পাহাড়ে উচ্চ বিদ্যালয় ...

চট্টগ্রাম: চারদিকে উঁচু-নিচু পাহাড়, খাঁজে খাঁজে মাচাং ঘর। আছে সুপেয় পানির সংকট।

বিদ্যুৎ তো স্বপ্ন। অসুখ-বিসুখে কবিরাজই ভরসা।
যাতায়াতের পথ বলতে নদী কিংবা ঝিরি। বাকি পথ দুর্গম। এ অঞ্চলের মানুষ স্বপ্নেও ভাবতো না- সন্তান লেখাপড়া শিখবে, স্কুলে যাবে।  

রাঙামাটির দুর্গম বিলাইছড়ি উপজেলার মানুষ তাদের সন্তানের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখছেন একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কল্যাণে। এ পাহাড়ে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে তিনি নিয়েছেন নানান উদ্যোগ।  

সবুজ-শ্যামলে ঘেরা পাহাড়ের মাঝখানে গড়ে তোলা লাল টিনের ছাউনির স্থাপনা দেখে আসতে যে কারো মন চাইবে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্গম ইউনিয়ন বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের প্রথম উচ্চ বিদ্যালয়। এ ইউনিয়নে আগে উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না। ছিল না কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও।  

উপজেলার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতেই হিমশিম খেত। সেখানে উচ্চ বিদ্যালয় তো আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। শিক্ষার্থীদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামসেদ আলম রানা।  এরইমধ্যে বড়থলি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। চলছে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। জানুয়ারির প্রথমদিকে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পর পাঠদানের পরিকল্পনা রয়েছে ইউএনও'র।

চলতি বছরের ৮ এপ্রিল বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন জামসেদ আলম রানা। দায়িত্ব নিয়েই উপজেলার বিভিন্ন দুর্গম ইউনিয়ন পরিদর্শন করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে নানা কর্মসূচি হাতে নেন। ঘরে ঘরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান নিজেই।  

বিলাইছড়ি উপজেলা হতে বান্দরবান জেলার রুমা হয়ে পায়ে হেঁটে এই ইউনিয়নে যেতে লাগে ৩ দিন। বলতে গেলে সব ধরনের সুযোগ সুবিধায় পিছিয়ে এই ইউনিয়ন। শিক্ষা বিস্তারের জন্য শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই সামাজিক সেবা কেন্দ্রের অধীনে পরিচালিত কিছু পাড়া কেন্দ্রে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্গম এই ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে উচ্চ বিদ্যালয়টি। এই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বড়থলি পাড়ায় বিদ্যালয়ের জন্য ১৮শ বর্গফুট আয়তনের ৫টি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। নামকরণ করা হয়েছে বড়থলি উচ্চ বিদ্যালয়, যেখানে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।  

বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামসেদ আলম রানা বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটি  জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান গত বছর বিলাইছড়ি উপজেলায় এসে একটি স্কুল ও অতি দুর্গম বড়থলি ইউনিয়নে একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। তারই আলোকে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের আর্থিক সহযোগিতায় বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন বড়থলি ইউনিয়নে উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ইতিমধ্যে বড়থলি উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য ১৮শ বর্গফুট আয়তনের ৫টি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে পাঠদান শুরু হবে।  

তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়টি ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধন করা হবে। ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। খুব শিগগির এই ইউনিয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

বড়থলি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জামাইয়া তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বড়থলি ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের একটি দাবি ছিল- পিছিয়ে পড়া দুর্গম এই ইউনিয়নে সরকারি উদ্যোগে একটি প্রাইমারি এবং একটি হাইস্কুল স্থাপন করা। অবশেষে আমরা হাইস্কুল পেয়েছি। আমি বড়থলি ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করছি, খুব দ্রুত এই ইউনিয়নে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৪ 
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।