ঢাকা, রবিবার, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শিক্ষার্থীকে মারধর: পুলিশের ডিসি-ওসিসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রেকর্ড

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
শিক্ষার্থীকে মারধর: পুলিশের ডিসি-ওসিসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রেকর্ড ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: পুলিশের হেফাজতে নাজমুল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি), সহকারী কমিশনার (এসি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।  

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) নগরের বাকলিয়া থানায় মামলায় হেফাজত নিবারণ আইনে মামলাটি রেকর্ড করা হয়।

মামলায় সিএমপির পুলিশ কর্মকর্তাদের আসামি করায় মামলাটি গোপনীয়তা রক্ষা করতে দেখা গেছে পুলিশ কর্মকর্তাদের।  

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেনের আদালতে এই মামলার আবেদন করেন মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর বড় ভাই মো. নজরুল ইসলাম।

ভিকটিম নাজমুল হোসেন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

মামলায় আসামিরা হলেন, সিএমপির দক্ষিণ জোনের সাবেক ডিসি মোস্তাফিজুর রহমান, কোতোয়ালী জোনের এসি অতনু চক্রবর্তী, কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি এস.এম ওবায়েদুল হক, বাকলিয়া থানার সাবেক ওসি আফতাব উদ্দিন, কোতোয়ালী থানার পেট্রোল ইন্সপেক্টর (ট্রাফিক) মো. মিজানুর রহমান, বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুস সালাম, কোতোয়ালী থানার এসআই মো. মেহেদী হাসান, এসআই গৌতম, বাকলিয়া থানার এসআই মো. মিজান, কোতায়ালী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রুবেল মজুমদার, এএসআই রনেশ বড়ুয়া, কোতায়ালী থানার মুন্সী মো.শাহজাহান, কনস্টেবল মো. কামাল ও বাকলিয়া থানার কনস্টেবল মো. ইলিয়াছ।  

ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) শাহনেওয়াজ খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা রেকর্ডের পর আদালতের আদেশ মোতাবেক এটির তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি।  

মামলার বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট স্বরূপ কান্তি নাথ বাংলানিউজকে বলেন, সিআইডিকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভিকটিম নাজমুল হোসেন, মামলার বাদী মো. নজরুল ইসলাম ও তার পরিবারকে নিরাপত্তা কেন দেওয়া হবে না, তা ১৪ দিনের মধ্যে জানাতে আসামিদের প্রতি নির্দেশ দেন।

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, নগরের বাকরিয়া থানার নতুন বিজ্র এলাকা গত ১৮ জুলাই বন্ধুদের সঙ্গে নাজমুল হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়। পরে পুলিশ ছাত্রদের ওপর অতর্কিতভাবে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং রাবার বুলেট ছোড়ে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে সুস্থ অবস্থায় নাজমুলকে আটক করে শারীরিক আঘাত করতে করতে পুলিশ বক্সে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ সদস্যরা লোহার স্টিক, বক্সে থাকা স্ট্যাম্প দিয়ে নাজমুলকে বেধড়কভাবে সারা শরীরে শিবির বলে পেটাতে থাকে। পরে নাজমুলকে পুলিশের একটি গাড়িতে করে প্রথমে চান্দগাঁও এবং আধঘণ্টা পর কোতোয়ালী থানায় নেওয়া হয়। গাড়ি থেকে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে ৩ জন এসআই ও এক কনস্টেবল ‘শিবির আনা হয়েছে’ বলেই এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। পরে থানার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে ‘মজা কি এখনই বুঝবে’ বলে উল্লাস করে নাজমুলের দুই হাত উপরে তুলে দেওয়ালমুখী করে দাঁড় করিয়ে কাঠের স্ট্যাম্প এবং পুলিশের ব্যবহৃত লোহার লাঠি দিয়ে পিঠ, কোমর ও দুই পায়ের উরুতে বেদম মারধর করে।   এএসআই রুবেল মজুমদার স্ট্যাম্প দিয়ে নাজমুলকে আঘাত করলে ডান চোখের নিচে মুখে রক্তাক্ত জখম হয়। ওইসময় কোতোয়ালী জোনের এসি অতনু চক্রবর্তী এবং থানার সাবেক ওসি ওবায়েদুল হক ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে চেক করতে থাকে। ওসি মোবাইল ফোনে কিছু না পেয়ে নাজমুলকে শিবির করে কিনা জিজ্ঞাসা করে। তিনি না সূচক জবাব দিলে বুকে লাথি মেরে ফ্লোরে ফেলে দুটি কাঠের স্ট্যাম্প দিয়ে নাজমুলের দুই হাতের দুই বাহুর উপর রেখে ওই স্ট্যাম্পের উপর দুই জন করে দুই পাশে দাঁড়ায়। এসময় এসি ও ওসি তাকে শিবিরকর্মী বলে স্বীকার করে নিতে জোর করে। একপর্যায়ে নাজমুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শারীরিক অবস্থা গুরুতর দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু চমেক হাসপাতালে না নিয়ে তাকে পুনরায় কোতোয়ালী থানায় নেওয়া হয়। ওইদিন বিকেলে গুরুতর আহত অবস্থায় বাকলিয়া থানা পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়ে হাজতে রাখে। নাজমুলের বড় ভাই নজরুল খবর পেয়ে বাকলিয়া থানায় যায়। এ সময় মানসিক নির্যাতনে নাজমুল আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে।  থানা হাজতে রাত ১১টার দিকে নাজমুলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাজমুলকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত কারাগারে পাঠালে সেখানে ১৪ দিন বন্দি থাকার পর জামিনে মুক্তি পান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।