ঢাকা, সোমবার, ২২ পৌষ ১৪৩১, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫ রজব ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর আনোয়ারার জলাশয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৫
পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর আনোয়ারার জলাশয় ...

চট্টগ্রাম: শীতের সঙ্গে দেশে আসে অনেক পরিযায়ী পাখি। এসব পাখি আমাদের দেশের নয়, অনেক দূর দেশ থেকে তারা এ সময় উড়ে আসে একটু আশ্রয় ও খাদ্যের আশায়।

 

যেসব দেশে শীতের তীব্রতা খুব বেশি, খুব ঠান্ডায় যেখানে পাখিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে, খাবার থাকে না, সেসব দেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ পাখি আমাদের দেশে চলে আসে।

এবার শীতের শুরুতে আনোয়ারায় এসেছে ঝাঁকে ঝাঁকে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি।

এসব পাখির ওড়াউড়ি আর পানিতে ডানা ঝাপটানোর দৃশ্য মন জুড়ায়। পাখির কলকাকলীতে মুখর আনোয়ারা উপজেলার সাগর উপকূল, কোরিয়ান ইপিজেডের লেক, উপজেলা পরিষদের পুকুর, ছুরুত বিবির দিঘি, মনু মিয়ার দিঘি, কালা বিবির দিঘি, খাসখামা দিঘি, গুজরা দিঘি, পদ্ম পুকুরসহ উপজেলার প্রাচীনতম ও বৃহত্তম দিঘি-জলাশয়গুলোয়। দেয়াঙ পাহাড়ের গাছ-গাছালিতে বসেছে পাখির মেলা।  

পরিযায়ী পাখির আগমন ঘিরে উপজেলার নান্দনিক সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে। সাগর উপকূল, পারকি সৈকত, কোরিয়ান ইপিজেডসহ বিভিন্ন দিঘি-জলাশয়ে সাদা বক, কবুতর, পানকৌড়ি, সাগর কৈতর, পাতিহাঁস, বালিয়া, গাংচিল, ঘুঘু, সারস, রাতচোরা, হরিয়ালসহ নানা প্রজাতির হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির আগমন পাখি প্রেমিক ও পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করে।  

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায় পরিযায়ী পাখির দল। সন্ধ্যা নামলেই দেয়াঙ পাহাড় ও দিঘি-জলাশয়ের পাড়ে গাছ-গাছালিতে আশ্রয় নেয় এসব পাখি। উপযুক্ত আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের জোগান থাকায় পাখিগুলো এসব স্থানে আশ্রয় নেয় প্রতিবছর শীতের সময়।

পাখি বিশারদরা বলছেন, পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে গবেষকেরা ১ হাজার ৮৫৫ প্রজাতির পাখিকে পরিযায়ী পাখি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে। এসব পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- হাঁস, রাজহাঁস, কালেম, ডাহুক, ছোট সরালি, খঞ্জনা, চটক, মাঠ চড়ুই, কসাই পাখি, গাঙচিল, নীলশির, রালশির, কালো হাঁস, লেঞ্জা হাঁস, খুদে গাঙচিল, কুন্তি হাঁস, জিরিয়া হাঁস, চখাচখি, বালি হাঁস, বড় সরালি, কালি বক, জলময়ূর, ডুবুরি, কোপা ডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি, কালো কুট, কাদাখোঁচা বা চ্যাগা, জালের কাদাখোঁচা, ছোট জিরিয়া, বাটান, চা পাখি, গঙ্গা কবুতর, সবুজ পা, লাল পা, পিউ, রাজ সরালি, পিন্টেল, পাতি সরালি, সাদা বক, দলপিপি, পানমুরগি, কাস্তেচড়া, বেগুনি কালেম, পানকৌড়ি, ইগল, পিয়াং হাঁস, ভুতি হাঁস, ধুল জিরিয়া ইত্যাদি।  প্রতিবছরই দুইবার এরা এ দেশে আসে। শীতেই সবচেয়ে বেশি পাখি আসে।  

খাসখামা গ্রামের মো. আজম জানান, প্রতিবছর শীত এলেই খাসখামা দিঘিতে নানা রকম অতিথি পাখির ঢল নামে। শৈশব থেকেই এ দৃশ্য দেখে আসছি। সকাল-সন্ধ্যা অতিথি পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখর থাকে এই এলাকা। শীতের শুরুতে পাখিগুলো আসে আবার গরম পড়তেই চলে যায়।

পাখিপ্রেমিরা জানান, এই সময়ে এসব পাখির ওপর লোভাতুর দৃষ্টি পড়ে কিছু মানুষের। পাখি শিকারিরা মেতে ওঠে পরিযায়ী পাখি শিকারে। দেশে পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকলেও তারা তা উপেক্ষা করে শিকার করে চলে, বাজারে বিক্রি করে। আর আমরা অনেকেই সেই সব পাখি কিনি, হত্যা ও রসনাবিলাস করি। যারা আমাদের কাছে একটু আশ্রয় ও উষ্ণতার আশায় আসে, আমরাই তাদের নিরাশ্রয় করি।

কোরিয়ান ইপিজেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, অতিথি পাখিদের আবাসস্থলের পরিবেশ সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরিযায়ী পাখি নিজেদের নিরাপদ মনে না করলে এখানে আর আসবে না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র ঠিক রাখতে এসব পাখির ভূমিকা রয়েছে। তাই এসব পাখির বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে স্থানীয় লোকজনকে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৫
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।