চট্টগ্রাম: মূল সড়ক থেকে রেলওয়ে স্টেশনে ঢুকতেই দক্ষিণ পাশে চোখে পড়বে দুটি বইয়ের দোকান। একটি বাবুল বড়ুয়ার, অন্যটি মোশাররফ হোসেনের।
একসময় দুই দোকানে মাসুদ রানা সিরিজসহ বিভিন্ন গল্প উপন্যাস, পত্রপত্রিকা-সাময়িকী বিক্রি হতো।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেক সময় যাত্রী ও অভিভাবকেরা বাবুলের কাছ থেকে নতুন বই, সাময়িকী কিনতেন।
করোনা মহামারিতে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, ট্রেন চলাচল বন্ধ ও সীমিত করায় এ পেশার কষ্ট বুঝেছেন মোশাররফ। বই বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েছেন চিপস, বিস্কুটসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্য বিক্রিতে। হরেক রকমের পণ্য বেচে এখন পাঁচ সদস্যের পরিবার চালাচ্ছেন মোশাররফ।
দুজনের মধ্যে বাবুল একসময় নগরের নিউমার্কেট এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ থাকতেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বেচা-কেনা কমে যাওয়ায় বাসা ভাড়া আর সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তাই পরিবারকে পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে। এখন ব্যাচেলর বাসায় সিট ভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি।
শুধু বাবুল বড়ুয়া কিংবা মোশাররফই নন। নগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বই বিক্রির পেশা ছেড়েছেন অনেক পেশাদার ব্যবসায়ী। স্বল্প পুঁজির এই ব্যবসায়ীরা জানান, বই কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়, এ ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমনিতেই বইকেনার মানুষ কমছে, তার ওপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। জমানো পুঁজি শেষে অনেকে এখন ধারদেনা করে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন।
আব্দুর রহমান। চকবাজার এলাকায় বই বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন বই বিক্রির পাশাপাশি আয়না, চিরুনি, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, রুমাল বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, গুদামে ৭-৮ হাজার বই পড়ে আছে। বাধ্য হয়ে ব্যবসা বদল করেছি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে আবারও বইয়ের ব্যবসায় ফিরবো।
তিনি বলেন, বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে বই বেচাবিক্রি বেশি হতো। এখন চাকরির প্রস্তুতির বইও বিক্রি করতে পারছেন না। কিছুদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও এখন আবারও দুই সপ্তাহের বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছি।
রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বইয়ের দোকানে চিপস হরেক রকম সামগ্রী দেখে হতবাক হয়েছি। চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ঐতিহ্যবাহী বইঘর এটি। একসময় সারি সারি বই সাজানো থাকতো। এখন বই বিক্রি হয় না বাবুল আঙ্কেলের দোকানে। আমি ঢাকা যাওয়ার সময় এখান থেকে বই কিনে নিয়ে পড়তাম। কিন্তু এখন বইয়ের বদলে বিস্কুট চিপস দেখে খারাপ লাগছে।
বইঘরের স্বত্বাধিকারী বাবুল বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, একটাও বই বিক্রি নেই। পরে বাধ্য হয়ে অন্য সামগ্রী বেচাকেনা করতে হচ্ছে। দোকান ভাড়া দিতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগে পরিবারসহ নিউমার্কেট এলাকায় থাকতাম। পরে করোনার কারণে বেচাকেনা বন্ধ হওয়ায় আমি ব্যাচেলর মেসে থাকি। পরিবার বাড়িতে চলে গেছে। একসময় বই বিক্রি হতো স্টেশনে যখন মানুষ ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতেন তখন বই কিনতেন সময় কাটানোর জন্য। এখন কেনে না। মানুষ মোবাইল দেখে। ৫ বছর দোকান করছি স্টেশনে। করোনা ভাইরাস সবকিছু যেন পাল্টে দিল।
পিপলস বুক এজেন্সির মালিক মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পুরাতন স্টেশনেও আমার বইয়ের দোকান ছিল। তখন থেকেই আমি বই বিক্রি করি। হঠাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সবকিছু কেমন যেন হয়ে গেল। বাধ্য হয়ে বইয়ের পাশাপাশি অন্য সামগ্রী বিক্রি করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২২
বিই/টিসি