চট্টগ্রাম: একুশে পদকে ভূষিত দৈনিক আজাদী সম্পাদক, সাবেক লায়ন গভর্নর এমএ মালেককে বর্ণিল আয়োজনে সংবর্ধনা দিয়েছে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫-বি৪।
রোববার (১৪ মার্চ) রাতে চিটাগং ক্লাবে বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেছেন, এমএ মালেক একনামে পরিচিত। আমি কয়েক বছরের বড়। উনি চিরতরুণ। তার বচন, বাচনভঙ্গি অসাধারণ। যখন লোকজন শুনতে শুনতে ক্লান্ত তখন উনি প্রাঞ্জল বলেন, প্রাণরস ছড়িয়ে দেন।
তিনি বলেন, করুণা অনেক জীবের মধ্যে আছে। কিন্তু একটি গুণ মানুষকে দিয়েছেন, সেটি হচ্ছে মানুষ প্রকৃতিকে পরিবর্তন করতে পারে৷ মাটির নিচের লোহা তুলে, ইস্পাত, যন্ত্রপাতি কত কী করি। আমরা এক্ষেত্রে স্রষ্টা। মানবজাতির কল্যাণে সৌভাগ্যবানদের বড় ত্যাগ করতে হবে।
অনুপম সেন বলেন, আজাদী দুইটি অনন্য গৌরবের অধিকারী। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম কবিতা 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি', বাংলাদেশ স্বাধীনের খবর প্রথম প্রকাশের সঙ্গে আজাদী জড়িত। এমএ মালেক একুশে পদকের যোগ্য, সামনে আরও অনেক কিছু পাবেন আশাকরি।
সংবর্ধিত অতিথি এমএ মালেক বলেছেন, আপনাদের ভালোবাসার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। একুশ আমার অহংকার। একুশ মানে মাথা নত না করা। আমরা সবাই এ পৃথিবীর পথিক। কয়েকজন পথিকৃৎ। ড. অনুপম সেন পথিকৃৎ। ৫৭ সালে লায়নিজমে এসেছিলাম। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি লায়ন এমআর সিদ্দিকীকে।
রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, প্রশংসা শুনে আমি লজ্জিত হই। কিন্তু সেই প্রশংসার জন্য গোপনে অপেক্ষা করি। দয়া অন্ধও দেখতে পারে, বধির শুনতে পান। চার্লি চ্যাপলিন বলেছেন, আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু আয়না। কারণ আমি যখন হাসি, সে কাঁদে না।
লায়নরা বিশ্বে সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে অগ্রগামী। একুশে পদক পেয়েছি আপনাদের জন্য। আমি বলি, কিছু করতে হলে লেগে থাকতে হবে। তাহলে সাফল্য আসবে। মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই। প্রতিটা মুহূর্ত আনন্দময় করুন, উপভোগ করুন।
আমার মতো এত বেশি সময় কেউ সংবাদপত্রে জড়িত নেই। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি, চট্টগ্রামের সাংবাদিক দিয়ে আজাদী পরিচালনার। কারণ চট্টগ্রাম মানুষ এখানকার সমস্যা সম্ভাবনা ভালোভাবে তুলে ধরতে পারবে। বাংলাদেশে আজাদীর ২ জন সম্পাদক স্বাধীনতা ও একুশে পদক পেয়েছি।
আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। ঘুরতে ভালোবাসি। রাশিয়া ছাড়া এমন কোনো দেশ নেই যেখানে যাইনি। আমার কোভিড হয়েছিল। কোভিড না হলে বুঝতাম না এর প্রভাব কেমন।
সাবেক লায়ন গভর্নর কামরুন মালেক বলেন, কিছুদিন আগে কোমরে ব্যথা। মালেক সাহেব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেন। চিকিৎসক বললেন, অ্যাক্টিভিটিজ কমাতে হবে। তখন মালেক সাহেব বলেন, শুধু লায়নিজমের প্রোগ্রামে যাবে আর কি। আমরা সংবর্ধনা চাই না, ভালোবাসা চাই। সবাই আমাদের পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।
সদ্য বিদায়ী জেলা গভর্নর লায়ন ডা. সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেন, এমএ মালেকের 'লেগে থাক' কথাটা আমাকে উজ্জীবিত করে। তিনি সমাজের কুসংস্কার তুলে ধরেন বক্তব্যে৷ তিনি চট্টগ্রামের অরাজনৈতিক অভিভাবক। উনি এগিয়ে এসেছেন ক্যান্সার হাসপাতাল গড়তে। ২৫ কোটি টাকা তুলেছেন এ হাসপাতালের জন্য। আশাকরি সমাজসেবায় তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারে সম্মানিত হবেন।
দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, এমএ মালেক লায়নিজম, সাংবাদিকতা, সমাজসেবাসহ সব ক্ষেত্রে সফল। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।
সাবেক জেলা গভর্নর রূপম কিশোর বড়ুয়া বলেন, মৃত্যুর পর সবাই বলেন লোকটা খুব ভালো ছিল। বেঁচে থাকতে বলা উচিত। আমার বড় ভাই মালেক সাহেব জীবদ্দশায় একুশে পদক পেয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
আমি ৪৭ বছর আগে লায়নিজমে যুক্ত হই। তখন থেকে মালেক ভাইকে দেখছি। তিনি গভর্নর হওয়ার ৩০ বছর পর কামরুন মালেক গভর্নর হন। মালেক ভাই কখনো কান্না করেন না, রাগেন না। তিনি শুধু হাসেন, মানুষের মুখে হাসি ফোটান। তাঁর জন্মদিনে আনন্দাশ্রু দেখেছিলাম।
সাবেক জেলা গভর্নর রফিক আহমেদ বলেন, সাধারণের মধ্যে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব এমএ মালেক। তিনি আসলে চুম্বক। তার কাছে এসে মনে হয়েছে মানুষকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করতে পারেন। সরকারের পক্ষ থেকে একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। এটি শুধু এমএ মালেক পাননি, চট্টগ্রামবাসী পেয়েছেন। তাঁর সম্মানে তাঁর সংস্পর্শে থাকা মানুষ গৌরবান্বিত মনে করে। তিনি মানুষকে ভালোবেসেছেন। চট্টগ্রামের মানুষের ভালোবাসা তাঁর বড় প্রাপ্তি।
সাবেক লায়ন জেলা গভর্নর নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা উচ্ছ্বসিত একুশের চেতনায় উজ্জীবিত একটি পদক লায়ন পরিবারে পেয়েছি। এমএ মালেক বিনয়ী মানুষ। সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটান তিনি।
সাবেক লায়ন জেলা গভর্নর মোস্তাক আহমদ বলেন, প্রকৃত লিডারশিপের প্রতিচ্ছবি লায়ন এমএ মালেক। তাঁর হাসি, কথা, নেতৃত্ব মানুষকে কাছে টানে। এমন পজেটিভ মানুষ আমি দেখিনি। চট্টগ্রামের মানুষের আস্থা তাঁর ওপর। লায়ন্স পরিবারের আর কেউ এত বড় পদক পাননি। তিনি তাঁর স্বপ্নকে অতিক্রম করেছেন। তাঁর সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা সাবেক লায়ন গভর্নর কামরুন মালেক।
লায়ন জেলা গভর্নর আল সাদাত দোভাষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, সাবেক জেলা গভর্নর লায়ন মনজুরুল আলম মনজু,
পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান লায়ন এমএ মালেকের বড় ছেলে দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক। ধন্যবাদ বক্তব্য দেন লায়ন আশীষ কুমার উকিল।
উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাসনা মুহুরী, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, নুরুল আমিন প্রমুখ।
উপস্থাপনায় ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমু।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২২
এআর/টিসি