কলকাতা: কেরল, পশ্চিমবঙ্গের বাম দুর্গ ভেঙে পড়েছে৷ বাকি রাজ্যে দুর্গ গড়াতো স্বপ্ন, সামান্য জমিটুকুও তৈরি হয়নি এতদিনে৷ কেন্দ্রেও দলের গুরুত্ব কমতে কমতে তলানিতে৷ সম্প্রতি ৫ রাজ্য থেকেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে সিপিএমকে৷
তাই প্রশ্ন উঠছে প্রকাশ কারাটের নেতৃত্ব নিয়ে৷ এই জটিল ও সঙ্কটজনক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই বুধবার থেকে কেরলের কোঝিকোড়ে বসছে সিপিএমের ২০তম পার্টি কংগ্রেস৷ এবারের পার্টি কংগ্রেস দলের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ কংগ্রেস৷
তাই ২০১৪ সালে দলের রাজনৈতিক লাইন, রণকৌশল কী হবে সেটিও স্থির হবে এবারই৷ ফলে এই পার্টি কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল৷ এছাড়া পার্টি কংগ্রেস শুরুর আগে এখন জোর জল্পনা চলছে, পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে সম্ভাব্য রদবদল নিয়েও৷
রাজ্য সিপিএম সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এবার ৩ জনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে৷ এরা হলেন রবীন দেব, নৃপেন চৌধুরী ও শ্রীদীপ ভট্টাচার্য৷ উক্ত ৩ জনই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য৷
এর মধ্যে রবীন দেব এবারের পার্টি কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি দলের নেতা৷ নৃপেন চৌধুরী কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক তথা মুর্শিদাবাদের প্রবীণ নেতা৷ শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার৷ তিনি হাওড়ার জেলা সম্পাদকের দায়িত্বও সামলেছেন৷
এই তিনজনের মধ্যে দু’জন অন্তত কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাবেনই এমনটাও সিপিএম সূত্রে খবর৷ পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলে জোরালো জল্পনা চলছে যে, রাজ্য কমিটির মতোই শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবার কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও সরে দাঁড়াতে পারেন বিনয় কোঙার৷
এদিকে, পলিটব্যুরো থেকে ইতিমধ্যেই অব্যহতি চেয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ তার অনুরোধ সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব মেনে নিলে, তার জায়গায় পলিটব্যুরোতে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা সূর্যকান্ত মিশ্রের৷ কারণ, বিরোধী দলনেতা হিসাবে তার ভূমিকায় দারুণ সন্তুষ্ট সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷ এছাড়াও এর আগে যখন শিল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল সিপিএম, তখন পলিটব্যুরোতে গিয়েছিলেন নিরুপম সেন৷
আর এবার নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর থেকে শিক্ষা নিয়ে সিপিএম যখন ফের কিছুটা কৃষির পথে, তখন কৃষক ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি হিসাবে সূর্যকান্ত মিশ্রের পলিটব্যুরোতে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ পাশাপাশি আরও যে ২ জনের নাম রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে তারা হলেন, মহম্মদ সেলিম ও নীলোৎপল বসু৷
রাজনৈতিক মহলে জোরালো জল্পনা, পলিটব্যুরো থেকে সরে আসতে পারেন মহম্মদ আমিন৷ সেক্ষেত্রে তার জায়গায় সংখ্যালঘু এবং জাতীয় রাজনীতিতেও পরিচিত মুখ সেলিমের পলিটব্যুরোতে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সবাই৷
এদিকে, সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জোরদার করতে এ কে গোপালন ভবনে বসে সর্বক্ষণ কাজ করতে পারবেন এবং সবদিকে নজর রাখতে পারবেন এমন কাউকে৷ সেক্ষেত্রে মূলত দিল্লির রাজনীতিতেই বিশেষভাবে সক্রিয় নীলোৎপল বসুরও পলিটব্যুরোতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা৷
যদিও পার্টি কংগ্রেসের আগে ফের ধাক্কা লেগেছে সিপিএমে। সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট নিজে উপস্থিত থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে সদ্য রাজ্য সম্মেলন করিয়ে আসার পরে সেখানে পাল্টা রাজ্য সম্মেলনের ডাক দিয়েছে সিপিএমেরই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠি।
তারা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে সিপিএমের নামেই যারা পাল্টা সম্মেলন করছেন। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক বিধায়ক খলিল মহম্মদ। যিনি একাধারে কিষাণ সভার রাজ্য সম্পাদকও। তার সঙ্গে রয়েছেন মহম্মদ আমিন দার, ইয়াকুব ওয়ানি, মহম্মদ মকবুলের মতো নেতারা।
কিষাণ সভা, সিটু, ডিওয়াইএফআই-এর মতো গণ সংগঠনের একাংশ চ্যালেঞ্জ নিয়েছে পাল্টা সম্মেলনে রাজ্যের মোট সদস্যসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি লোক হাজির করে তারা দেখিয়ে দেবে।
সবমিলিয়ে এই পার্টি কংগ্রেসেই ঝড়ের মুখে পড়তে চলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১২
আরডি
সম্পাদনা: সুমন মজুমদার, নিউজরুম এডিটর