ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

খবর তৈরির খলনায়ক কেন্দ্রীয় সিনিয়র মন্ত্রী!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১২
খবর তৈরির খলনায়ক কেন্দ্রীয় সিনিয়র মন্ত্রী!

ঢাকা : ভারতের একটি জাতীয় দৈনিকে সেনা বিদ্রোহের ইঙ্গিতবহ খবর প্রকাশের পেছনে একজন কেন্দ্রীয় সিনিয়র মন্ত্রীর ইন্ধন রয়েছে। এ ‍দাবি করেছে নয়াদিল্লিভিত্তিক সাপ্তাহিক সানডে গার্ডিয়ান।



পত্রিকাটি দাবি করেছে ওই মন্ত্রীর এক আত্মীয় সেনাবাহিনীতে অস্ত্র সরবরাহকারীদের অংশীদার। এ সূত্রে তার স্বার্থেই ওই মন্ত্রী একাজ করেন। তাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

সাপ্তাহিক পত্রিকাটির মতে, ওই মন্ত্রী চেয়েছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ভি কে সিং-এর সঙ্গে সরকার ও দেশের রাজনীতিকদের চলমান দ্বৈরথকে আরও শোচনীয় করে তুলতে।

সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, উল্লেখিত মন্ত্রী ওই খবর ছড়ানোয় জড়িত। কারণ তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় সংক্রান্ত লবির সঙ্গে জড়িত। মন্ত্রীর ওই আত্মীয়ের সঙ্গে সেনাপ্রধান ভিকে সিংয়ের বৈরিতা চরম পর্যায়ে রয়েছে এখন।

সাপ্তাহিক পত্রিকাটির প্রতিবেদন মোতাবেক এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশে ইন্ধন যুগিয়ে ওই মন্ত্রী আশা করেছিলেন, বহু বিতর্কিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মত ভারতীয় সেনাবাহিনীরও ক্ষমতালোভী আচরণের হুজুগ তুলে সেনাপ্রধানের বিপক্ষে দেশের রাজনীতিকদের একাট্টা করতে।

কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় এ ধরনের সংবাদ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার হিসেব কষতে ভুল করেছিলেন। মনমোহন রাজধানীমুখী সেনা অগ্রসর হওয়া বিষয়ক ওই খবরকে ‘আশংকাজনক’ বলে আখ্যায়িত করেন। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি এ ধরনের খবরের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

সানডে গার্ডিয়ানের মতে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ধারণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওই খবরে কোনও মন্তব্য করতে অস্বী‍কৃতি জানাবেন এবং এ সূত্রে সেনাপ্রধানের পদত্যাগের বিষয়ে দেশজুড়ে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হবে।

সানডে গার্ডিয়ান আরও জানায়, ওই মন্ত্রীর কথিত আত্মীয়  অস্ত্র ব্যবসায়ী ও তাদের লবিস্টদের সঙ্গে বিদেশের মাটিতে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ ও বৈঠক করতেন। অস্ত্র সরবরাহকারীদের ওই লবিস্টরা ভারতে থেকে যাওয়া ভিভিআইপি ব্যক্তিদের লন্ডন, দুবাই ও ব্যাংককে বিভিন্ন ধরনের মনোরঞ্জন ও আপ্যায়ন করাসহ নানা উপহার উপঢৌকন দিয়েছেন।    

তবে বাস্তবতা যা-ই হোক, দিল্লি অভিমুখে সেনাদলের অগ্রসর হওয়ার খবর এবং এ নিয়ে এখন পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের লবিস্ট তথা দালালদের হাত নয়াদিল্লি প্রশাসনের অনেক গভীরে প্রোথিত।

পত্রিকাটির মতে, অস্ত্র সরবরাহকারীদের লবিস্ট বা দালালদের পক্ষে একজন কেন্দ্রীয় সিনিয়র মন্ত্রীর তৎপরতার এই খবর দিল্লির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বাতাবরণে বারবার আলোচিত হবে এবং একই কারণে মনমোহনের সরকারকে পড়তে হবে অস্বস্তিতে।

এদিকে, ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের একটি সূত্র টিভি চ্যানেল জী নিউজকে জানিয়েছে, সেনা প্রধান ভিকে সিংকে বেকায়দায় ফেলার জন্য একটি পক্ষ তৎপর ছিল--- এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী মনমোহনকে জানানো হয়েছে।

গোয়েন্দারা মনমোহনকে জানিয়েছে, সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের টানাপড়েনের বাতাবরণ সেনাবাহিনীকে দুটি শিবিরে ভাগ করে ফেলেছে। এর ফলে এমনকি ব্রিগেড কমান্ডাররাও মিডিয়া এবং অস্ত্র ব্যবসায়ীদের গোপনীয় তথ্য সরবারাহকারী ‘টিকটিকি’র ভূমিকা পালন করছেন।      

উল্লেখ্য, গত বুধবার ভারতের দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সেনাবাহিনীর দুটি সুসজ্জিত যুদ্ধ ইউনিট সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কাউকে না জানিয়েই রাজধানী দিল্লির দিকে যাত্রা করে। বিষয়টি টের পেয়ে সরকার শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং নয়াদিল্লিতে সতর্কতা জাড়ি করা হয়।

সংবাদে আরও বলা হয়, সরকারের গোয়েন্দা বিভাগসহ অন্য সবার অগোচরে দল দুটি নয়াদিল্লির উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। এ সংবাদের জের ধরে ভারতজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

প্রতিক্রিয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও সেনাপ্রধান জেনারেল ভি কে সিং ওই রিপোর্টকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, ০৫এপ্রিল, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর;

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।