কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে সম্প্রতি জনসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২ জানুয়ারি, দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কলকাতার নজরুল মঞ্চ থেকে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেখানেই ঘোষণা করা হয়, ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচির অন্তর্গত তৃণমূলের জেলার নেতা, সাংসদ, বিধায়কসহ সাড়ে তিন লাখ স্বেচ্ছাসেবী রাজ্যের প্রতিটি মানুষের বাড়িতে যাবেন। সেখানে সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে কথা বলবেন জনপ্রতিনিধিরা। কর্মসূচি চলবে দুমাস।
শুরু হয়েছে বুধবার (১১ জানুয়ারি) থেকে। কিন্তু শুরুর দিন থেকেই কর্মসূচি নিয়ে হিতে বিপরীতের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। গত বুধবার দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষকে দিয়ে শুরু। বৃহস্পতিবার ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) ছিলেন সাংসদ অভিনেত্রী শতাব্দী রায়, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্জুন সিং ও দলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। তবে দলের উচ্চস্তরের জনপ্রতিনিধির জনসংযোগ করতে গিয়ে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন।
তবে সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হয়েছে অভিনেত্রী শতাব্দী রায়ের ভিডিও। কথা ছিল দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে দলীয় কর্মীদের সাথে সাংসদ শতাব্দী একসঙ্গে এক প্রান্তিক পরিবারের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন করবেন। সেই মতো মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, এঁচোড়ের তরকারি, খাসির মাংস ও মাছ।
কথামতো দলের কর্মী-সমর্থকদের পাশে খেতে বসেছিলেন বীরভূম জেলার এই সাংসদ। কিন্তু শালপাতার থালায় দেওয়া মাংসভাত ছুঁয়েই দেখলেন না তিনি। খেতে বসার সাবলীল ছবি সাংবাদিকরা তোলার পরই উঠে পড়েন শতাব্দী। যা নিয়ে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা আক্ষেপ করে বলেছেন, অনেকেই ভেবেছিলেন, শতাব্দী দিদির সঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া করবেন। এই নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে আগ্রহও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, তা হলো না।
তবে শুক্রবার সকাল থেকেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন শতাব্দী। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শতাব্দী জানান, অনেকেই অভিযোগ, তারা বিনামূল্যে বাড়ির প্রকল্প পাননি। বার্ধক্যভাতা পাননি। রাজ্য সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধাও পাননি। তাই এই ক্ষোভ।
দিনভর সাধারণের বিক্ষোভের মুখে পরই ভোজন বিতর্কে নাম জড়ালেন শতাব্দী। একইভাবে বাঁকুড়া জেলায় গিয়ে বিপাকে পড়েন দিদির আর এক দূত অভিনেত্রী সায়ন্তিকা। গ্রামস্তরের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত বাসিন্দারা অভিনেত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সবটা শুনে শিগগিরই স্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোনো রকমে এলাকা ছাড়েন অভিনেত্রী।
শুধু তারা নন, মমতার প্রত্যেক দূতই একইভাবে বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। দলের অনেকেই, এটা খারাপ সঙ্কেত ভাবছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, জনসংযোগ বাড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়তে পারে দল। ক্ষোভের আগুনে কর্মসূচিই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারে।
তবে দলের একাংশ মনে করছে, এটা ভালো লক্ষণ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গ্রামের মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দলকে ভুল শুধরে নিতে সাহায্য করবে। কোথায় কোথায় উন্নয়নের খামতি রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে গেলে সমাধানের রাস্তা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি যে নেতা-নেত্রীরা জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিল তারাও শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
ভিএস/আরএইচ