ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

শাহরুখ খানের হাতে নববর্ষের উপহার প্রয়াগ ফিল্ম সিটি

রক্তিম দাশ, ব্যুরো চিফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১২
শাহরুখ খানের হাতে নববর্ষের উপহার প্রয়াগ ফিল্ম সিটি

প্রয়াগ ফিল্ম সিটি (পশ্চিম মেদিনীপুর): শুরু হয়ে গেছে কাউন্ট ডাউন। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা।

এই মুহূর্তে বলিউডের হার্টথ্রব শাহারুখ খানের হাত ধরে রোববার পর্দা উঠতে চলছে বিশ্বের বৃহত্তম ফিল্ম সিটি প্রয়াগ ফিল্ম সিটি।

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের চন্দ্রকোনা এলাকায় আরাবাড়ী সংরক্ষিত বনে প্রকৃতির কোলে বিশাল এলাকাজুড়ে এই ফিল্ম সিটির অবস্থান।

চলচ্চিত্র নির্মাণের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল ভারত। সিনেমা, নাটক এবং চলচ্চিত্রশিল্পের সব বিষয় একই স্থানে নিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ‘প্রয়াগ ফিল্ম সিটি’র।

রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় এই ফিল্ম সিটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার শাহরুখ খান কলকাতা থেকে প্রয়াগের নিজস্ব হেলিকপ্টারে আসবেন। এরপর দেশি-বিদেশি ৩০০ সাংবাদিক ও প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সামনে এই ফিল্ম সিটির সঙ্গে তার একাত্মতা ঘোষণা করবেন।

এই উপলক্ষে শুধু কিং খানই নন, বলিউড থেকে আসছেন, গোবিন্দ, কারিশমা কাপুর, রবিনা ট্যান্ডন, মনিষা কৈরালাসহ এক ঝাঁক সুপারস্টার।

আসছেন টলিউডের দেব, শ্রাবন্তীরাও। পাশের রাজ্য উড়িশার ওড়িয়া সিনেমার নায়ক, নায়িকাসহ চলচ্চিত্র জগৎয়ের মানুষেরা।

কলকাতায় জার্মান কনসাল জেনারেল, রাশিয়ার কনসাল জেনারেলসহ বাংলাদেশের নবনিযুক্ত উপ-হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম এই অনুষ্ঠানে আসছেন।

প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় দুই হাজার ৭০০ একর জমিতে প্রয়াগ ফিল্ম সিটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিল্ম সিটি।

সেট বা স্টুডিও থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রশিল্পের সবকিছুই থাকছে সমন্বিত এই ফিল্ম সিটিতে। কলকাতা থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার দূরত্বে ১৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে চন্দ্রকোনা সড়কে এর অবস্থান।

দর্শনার্থীদের জন্যও প্রয়াগ ফিল্ম সিটি হবে ঘুরে বেড়ানোর মতো একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। যেখানে দর্শকরা সিনেমা তৈরি দেখা থেকে শুরু করে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারণা পাবেন।

ফিল্ম সিটির স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান ‘প্রয়াগ গ্রুপ’র চেয়ারম্যান বাসুদেব বাগচী এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘বলিউডের সিনেমাসহ উপমহাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য প্রয়াগ ফিল্ম সিটি হচ্ছে এক অনন্য সৃষ্টি। ’

তিনি বলেন, ‘পরিচালক শুধু স্ক্রিপ্ট এবং অভিনেতাদের নিয়ে এখানে আসবেন এবং পুরো সিনেমা নিয়ে বেরিয়ে যাবেন। ’

প্রয়াগ ফিল্ম সিটির স্থাপত্য, নকশা ও পরিকল্পনা করেছেন বলিউডের প্রখ্যাত আর্ট ডিরেক্টর নীতিশ রায়। নীতিশ অবশ্য দক্ষিণ ভারতের হায়দারাবাদের রামোজি রাও ফিল্ম সিটির নকশাও করেছেন। তিনি রামোজি রাও ফিল্ম সিটির চেয়ে বড় পরিসরে প্রয়াগ ফিল্ম সিটির নকশা করেছেন।

ফিল্ম সিটি প্রসঙ্গে প্রয়াগ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভীক বাগচী জানান, ‘পরিকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে প্রয়াগ ফিল্প সিটি হবে রামোজি রাও ফিল্ম সিটির চেয়েও আধুনিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। ’

প্রয়াগ ফিল্ম সিটিতে বন, সাগর, পাহাড়, মরুভূমি, বরফের মতো প্রাকৃতিক বিষয়গুলো ছাড়াও আইফেল টাওয়ার, পিরামিড, আধুনিক শহরের সুউচ্চ ভবন ও বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যসহ ১১০টি আইটেমের প্রতিরূপ তৈরি করা হয়েছে। চলচ্চিত্রায়নের মাধ্যমে এ স্থাপনাগুলোকে একেবারেই আসল বলে মনে হবে।

অভীক বাগচী বলেন, ‘অন্য ফিল্ম সিটিতে এসব প্রতিরূপ হয়েছে দ্বি-মাত্রিক, যা শুধু সামনে থেকে দেখতে হয়। কিন্তু প্রয়াগ ফিল্ম সিটিতে এ সবের ত্রি-মাত্রিক বা অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করা হয়েছে। ’

এছাড়াও সেখানে রয়েছে নিজেদের ট্রেন লাইন, রেলস্টেশন, ট্রেন, হেলিকপ্টারসহ হ্যালিপ্যাড ও গলফ কোর্স। নিজস্ব হেলিকপ্টার এরই মধ্যে ফিল্ম সিটিতে এসে পৌঁছেছে।

প্রয়াগ ফিল্ম সিটিতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ৫০টি স্টুডিও-ফ্লোর থাকছে। আনুপাতিকহারে থাকছে সাউন্ড স্টুডিও। ১৬ মিমি থেকে ৩৫ মিমিসহ ডিজিটাল ও সিনেমাস্কোপ শ্যুটিংসহ এর ল্যাবরেটরিতে থাকছে সব ধরনের আধুনিক প্রসেসিং সুবিধা। এসবের সুবাদে দক্ষিণ ভারতের চেয়েও উন্নত আউটপুট পাওয়া সম্ভব।

প্রয়াগ ফিল্ম সিটিতে একসঙ্গে অন্তত ৬০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণকাজ শুরু করে শেষ করা যাবে। এমনভাবেই এর নকশা ও পরিকল্পনা করা হয়েছে।

প্রয়াগ ফিল্ম সিটির পুরো নির্মাণকাজ শেষ হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। তবে এরই মধ্যে এর প্রথম পর্বের কাজ শেষে হয়েছে। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে।

এরই মধ্যে এই ফিল্ম সিটিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়েছে। মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘জলে জঙ্গলে’ সিনেমার শুটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সায়েন্টিফিক থ্রিলারধর্মী এই ছবিতে ৬০ ফুট দীর্ঘ একটি ডিজিটাল কুমির দেখানো হয়েছে; যা প্রয়াগ ফিল্ম সিটির কর্মীরাই তৈরি করেছেন।

দর্শনার্থী ও অভিনেতাসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের রাতযাপনের জন্য প্রয়াগ ফিল্ম সিটিতে তৈরি করা হচ্ছে দুইটি পাঁচ তারকা হোটেল। একটি পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট, দুইটি তিন তারকা মানের হোটেলসহ মাঝারি মানের আবাসিক হোটেল। এছাড়া উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা তো থাকছেই।

ফিল্ম সিটির প্রাঙ্গণে থাকছে শিশুদের জন্য বিনোদনকেন্দ্র, যেখানে অত্যাধুনিক ২৫০টিরও বেশি রাইড থাকছে। এছাড়াও থাকছে জঙ্গল, সাফারি ও অ্যাডভেঞ্চার কোর্স।

প্রয়াগ ফিল্ম সিটির দ্বিতীয় ধাপে একটি চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট ও হসপিটালিটি ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হবে বলে জানান অভীক বাগচী।

প্রসঙ্গত, প্রয়াগ গ্রুপ দীর্ঘ দু’দশক ধরে জীবনবীমা থেকে শুরু করে সিমেন্ট, অর্নামেন্টাল ফিশারিজ, জৈব সার, চা বাগান, সংবাদপত্র, বেকারিজ, ফুটবল ক্লাব, হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, ভাড়ায় হেলিকপ্টার সার্ভিসের ব্যবসা সফলভাবে পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশের জন্য বিশেষ অফার
প্রয়াগ ফিল্ম সিটিতে চলচ্চিত্রসহ যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজে বাংলাদেশের নির্মাতাদের জন্য বিশেষ অফার থাকছে।

প্রয়াগ গ্রুপের চেয়ারম্যান বাসুদেব বাগচী এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের সন্তান। আমার পূর্বপুরুষের ভিটা টাঙ্গাইলের বাথুলি গ্রাম। ’

বাংলাদেশের সঙ্গে সবসময়ই মাটির টান অনুভব করি বলেও মন্তব্য করেন বাসুদেব বাগচী।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা প্রয়াগ ফিল্ম সিটি ব্যবহার করলে বিশেষ ছাড় দেওয়ার ইচ্ছার কথাও জানান বাসুদেব বাগচী।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১২

আরডি/
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটডপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।