কলকাতা : আপত্তিকর কার্টুন নিয়ে সল্টলেকের ইলেকট্রনিকস কমপ্লেক্স থানায় সম্প্রতি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। সেই ঘটনার জেরে ক্যালিফোর্নিয়ায় সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সংস্থা ফেসবুকের সদর দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে সিআইডি।
গত ৯ এপ্রিল সল্টলেকের ইলেকট্রনিকস কমপ্লেক্স থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সুমন নস্কর নামে এক তৃণমূল কর্মী।
অভিযোগে তিনি বলেন, একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে কুৎসা প্রচার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই যাদবপুরের অধ্যাপক গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে।
এই পরিস্থিতিতে ১২ এপ্রিল অভিযোগের তদন্তভার নেয় সিআইডি। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সংস্থাকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে আপত্তিকর সমস্ত পোস্ট সরিয়ে ফেলতে বলেছে সিআইডি। পাশাপাশি, কে বা কারা ওই পোস্টগুলি আপলোড করেছিল, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
কিন্তু এই নিয়ে শুরু হয়েছে জলঘোলা। এই ধরনের কার্টুন বন্ধ করতে বিশ্বজুড়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোস্যাল নেটওয়াকিং সাইটের কোটি, কোটি কার্টুন মুছে ফেলতে হবে যা এক কথায় অসম্ভব।
একমাত্র ফেসবুকে নিষিদ্ধ করলেই আর কেউ ভারতে থেকে তা ব্যবহার করতে বা দেখতে পারবে না। যেমন চীনে ঘটেছে। এক্ষেত্রে আবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রশ্ন চলে আসবে।
এদিকে, ফেসবুকে কার্টুন প্রকাশ নিয়ে অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রর গ্রেফতার ইস্যুতে প্রতিবাদ চলছে। মঙ্গলবার কলকাতায় দুই জায়গায় এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে মিছিল করেন শহরের বুদ্ধিজীবীরা।
দুপুর তিনটায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবন থেকে শুরু হয় মিছিল। মিছিলের ডাক দেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। মিছিলে অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী এবং শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত স্তরের মানুষকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিলও। মিছিল শেষ হয় হাজরা মোড়ে।
অন্যদিকে, বন্দিমুক্তি কমিটির উদ্যোগে আরেকটি মিছিল শুরু হয় কলেজ স্কোয়ার থেকে। মিছিল শুরুর আগে কলেজ স্কোয়ারে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ছোটন দাস, তরুণ সান্যালসহ আরও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা। মিছিলটি শেষ হয় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে।
এর আগে, সোমবারই এই দুটি ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নামেন বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ। সাংস্কৃতিক মঞ্চ তূনীরের আয়োজনে এক প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন ওয়াসিম কপুর, পবিত্র সরকার, আজিজুল হক, চন্দন সেন, সইতা হালিম, গৌতম গুপ্ত সহ বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবিরা।
একই দিনে অপর একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সেই মঞ্চ থেকেও সরকারের সমালোচনায় সরব হন এমন অনেকেই যারা এক সময় ছিলেন পরিবর্তনের পক্ষে।
সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও প্রতিবাদকারীদের সমর্থন করে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, সরকার যেন সহানুভূতিশীল হয়। এর অন্যথা হলে তাকেও প্রতিবাদের রাস্তা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন মহাশ্বেতা দেবী।
বুধবারও একই ইস্যুতে মিছিলে সামিল হবেন কলকাতা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা। যাদবপুর থেকে ট্র্যাঙ্গুলার পার্ক পর্যন্ত হবে এই প্রতিবাদ মিছিল। মিছিল শেষে অধ্যাপকেরা দেখা করবেন রাজ্যপাল এমকে নারায়ণনের সঙ্গে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১২
আরডি/
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর