ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পুনর্বাসন চাওয়া ১৪৯টি পরিবারের জন্য ২৩ একর জমির তালিকা মনমোহনকে

শিলিগুড়ি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৭ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১২

কলকাতা : বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলগুলোর ১৪৯টি পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য কোচবিহারের ছিটমহলগুলোর মধ্যে ২৩ একর জমি চিহ্নিত করেছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। এ মর্মে শুক্রবার তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি দিয়েছেন।



ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহ সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা দুই পারে সমীক্ষা করে দেখেছি, ছিটমহল বিনিময় হলে বেশ কিছু পরিবার বাসস্থান পরিবর্তন করতে চান। এই সংখ্যাটা ১৪৯টি পরিবার, এর জনসংখ্যা ৭৪৩ জন। এর দুটি কারণ। প্রথমত, তারা বেশিরভাগই গরিব। ছিটমহলে বাসযোগ্য জমি ছাড়া আর কিছুই তাদের নেই। অন্যদিকে, তাদের আত্মীয়রা মূল ভূখণ্ডে বসবাস করেন। ’

তিনি বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কমিটির সদস্যরা স্বেচ্ছায় ২৩ একর জমি দান করতে ইচ্ছুক। সরকারের জমি অধিগ্রহণ করতে এর জন্য কোনো সমস্যা হবে না। আমরা আশা করি, এর ফলে জমি সংক্রান্ত যে সমস্যা ছিটমহল বিনিময়ের কারণে দেখা দেবে তার সমাধান করা যাবে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আগামী ৫ মে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ঢাকা যাচ্ছেন। তার আগেই এ বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানালাম। যাতে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যায়। ’

উল্লেখ্য, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি মেনে ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় হলে বাসিন্দা আদান-প্রদান বা পুনর্বাসনের সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলতে ওই ২৩ একর জমি চিহ্নিত দান করে দিতে চান ছিটমহলবাসী।

আন্তর্জাতিক এই চুক্তির বাস্তবায়ন হলে নাগরিকত্ব পাল্টে যাবে ভারতীয় ছিটমহলের ৩৭ হাজার এবং বাংলাদেশি ছিটমহলের ১৪ হাজার বাসিন্দার।

কিন্তু বাসিন্দারা যদি এই নাগরিকত্ব পরিবর্তনে রাজি না হন? সেক্ষেত্রে ১৯৭৪ সালের ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, তারা চাইলে আগে যে দেশের নাগরিক ছিলেন, সে দেশে পুনর্বাসন পেতে পারেন।

আর এ বিষয়টি থেকে জটিলতা শুরু হয়। ছিটমহল বিনিময় হলে কত জন নাগরিক এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে চান, ছিটমহলবাসীর সংগঠন ‘ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি’র কাছে তার একটা সাধারণ হিসাব জানতে চায় বাংলাদেশ প্রশাসন।

এর পরেই কমিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষায় নামে। সমীক্ষা হয় ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতেও।

সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতীয় ছিটমহলগুলোর ১৪ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ৭৪৩ জন বাংলাদেশের নাগরিকত্বের বদলে ভারতে পুনর্বাসন চান।

আর ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোর ৩৭ হাজার বাসিন্দার এক জনও বাংলাদেশে ফিরতে চান না।

বাংলাদেশে ছিটমহল বিনিময় কমিটির সম্পাদক গোলাম মুস্তাফা জানিয়েছেন, তারা ১৬২টি ছিটমহলের প্রতিটি পরিবারের কাছে গিয়েছিলেন। ১৭টি ভারতীয় ছিটমহলের ১৪৯টি পরিবার ভারতে ফিরতে চান।

মুস্তাফা জানিয়েছেন, ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের কাছে এরই মধ্যেই এই রিপোর্ট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার একযোগে ভারতের কোচবিহার জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের হাতে এ রিপোর্ট তুলে দেওয়া হয়েছে।

গত বছরই প্রথম দুই ছিটমহলে সরকারিভাবে জনগণনা করা হয়। সমন্বয় কমিটির সহযোগিতায় মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই সে কাজ সারা হয়।

ভারতে ছিটমহল বিনিময় কমিটির সহ সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বাংলানিউজকে বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, পুনর্বাসন চাওয়া ছিটমহলবাসীর দায়িত্ব কে নেবে, কেন্দ্রের কাছে সে প্রশ্নেরই জবাব চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। ’

তিনি বলেন, ‘তারপরই ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দারা সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে না থেকে নিজেরাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ছিটমহল থেকে আসা ১৪৯টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ’

তিনি আরো বলেন, ‘তাদের জন্য ৭টি ছিটমহলে ২৩ একর জমি নির্দিষ্ট করেছে সমন্বয় কমিটি। ১৩টি ছিটমহলের বাসিন্দা এ বসত জমি দান করেছেন। এ জমিতে তারা বাড়ি করলে অর্থ-সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। ’

দীপ্তিমান বলেন, ‘ছিটমহল বিনিময়ের জন্য এখানকার বাসিন্দারা কতোটা মরিয়া, এ পদক্ষেপই তার প্রমাণ। দু’দেশের সরকার এবার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়নে তৎপর হোক। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৯০৫ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১২
আরডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।