নয়াদিল্লি: বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় নারীদের আইনী সুরক্ষা দিতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত সরকার । বিবাহ আইনে আনা হচ্ছে বেশকিছু সংশোধনী।
সংশোধনীতে বলা হয়েছে স্বামীর বসতবাড়িতে অর্ধেক মালিকানা থাকবে বিবাহ বিচ্ছিনা স্ত্রী ও তার সন্তানদের। বিয়ের আগে বা পরে যে সময়েরই বসতবাড়ি হোক না কেন তার অর্ধেক মালিকানার ভাগিদার হবেন বিবাহ বিচ্ছিন্না নারী । নতুন এই সংশোধনীতে শিলমোহরও দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
চলতি সময়ের এই জেটযুগে সম্পর্কের ভাঙা গড়া ক্রমশই বাড়ছে। বিয়ের পরেই তৈরি হচ্ছে সম্পর্কের নানা জটিলতা। তৈরি হচ্ছে নতুন এক সম্পর্ক। যে সম্পর্কে তিক্ততার ভাগই বেশি। একই সঙ্গে রয়েছে সম্পর্কের ভার বহনের যন্ত্রণা।
এর থেকে মুক্তি পেতে বিবাহ বিচ্ছেদ বা ডিভোর্স মামলারই দ্বারস্থ হচ্ছেন অধিকাংশ দম্পতি। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ডিভোর্সের পর অনেক সময়ই নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হন নারীরা। তারপর বাকি জীবনের লড়াইটা বড়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তাদের।
বিবাহ বিচ্ছিন্না সেই সব নারীদের আইনী সুরক্ষা পৌঁছে দিতে এবার তাই বিবাহ আইনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সংশোধনীতে বলা হয়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের পরেও স্বামীর বসতবাড়ির অর্ধেক অংশের দাবিদার হবেন তার স্ত্রী। বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে এই প্রথম স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীয়ের অধিকার আইনী স্বীকৃতি পেতে চলেছে।
বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতার জন্য যে ৬ মাস সময় দেওয়া হয় সংশোধিত আইনে তা বহাল রাখা হয়েছে। তবে সংশোধিত আইনে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিচ্ছেদ হলে সমঝোতা করতে ৬ মাস সময় নাও নিতে পারেন সেই দম্পতি।
সেক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীকে যৌথভাবেই জানাতে হবে তাদের সময়ের প্রয়োজন নেই। বিচ্ছেদের পর স্বামীর বসতবাড়ির অংশ পেতে স্ত্রীকে আবেদন জানাতে হবে। বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্বামীর থেকে আদালতের রায়ে খোরপোশ ছাড়া আর তেমন কোনও আর্থিক সাহায্য পান না নারীরা।
১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইন, ও ১৯৫৪-র বিশেষ বিবাহ আইনে এই নতুন সংশোধনী অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিয়ে ভেঙে গেলেও আইনী ক্ষমতাতেই স্বামীর বসতবাড়ির অর্ধেক অধিকার পাবেন তার স্ত্রী। বিবাহ আইনে এই নতুন সংশোধনীতে তৈরি হয়েছে বিতর্কও।
পুরুষদের একাংশের মত, আইন অনুযায়ী নারী তাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে ভাগ পেয়ে থাকেন। এর পর স্বামীর সম্পত্তিতেও স্ত্রীর অর্ধেক অধিকার যা তার নিজের অর্জিত নয়, একে একপ্রকার আইনি পক্ষপাতদুষ্টতা বলেই দেখতে চাইছেন পুরুষদের একাংশ।
যদিও নতুন এই সংশোধনী পুরুষশাসিত এই সমাজের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও রুখে দাঁড়ানোর সাহস যোগাবে বলেই মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। আর্থিক ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীল হয়ে থাকার কারণে অনেক নারীই বাধ্য হন নীরবে স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে যেতে।
নতুন এই সংশোধনী সেই সব অত্যাচারিত, পীড়িত নারীদের এবার কিছুটা হলেও হয়ত অন্যায়ের প্রতিবাদে সাহস যোগাবে। সাহস যোগাবে, ‘নিজের ভাগ্য জয়’ করার অধিকারে এমনটাই মনে করছেন সামাজিক আন্দোলনের কর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা : আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর