নয়াদিল্লি : উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের মধ্যেই মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি৷
রাতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ডাকা নৈশভোজে প্রকাশিত হবে সরকারের রিপোর্ট কার্ড৷ তবে এ নৈশভোজে উপস্থিত থাকছেন না সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই শরিক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও ডিএমকের দুই শীর্ষ নেতা মমতা ব্যানার্জি ও এম করুনানিধি৷
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকার জন্য মমতা হাজির থাকতে পারছেন না বলে জানা গেছে। তবে করুনানিধি নৈশভোজে পাঠাচ্ছেন দলের নেতা টিআর বালুকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত রুপায়ণে প্রকট ব্যর্থতার মধ্যেই দ্বিতীয় দফায় ইউপিএ সরকার তিন বছর সম্পূ্র্ণ করলো।
ইতিমধ্যেই বিরোধী এবং শরিকি বাধায় খুচরো পণ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিসহ একাধিক আর্থিক বিল অনুমোদনের ব্যাপারে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে স্পষ্টতই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার বিশেষ করে, গত এক বছরে একের পর এক সংকটে পড়েছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি যথেষ্টই ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকার সময়ে বামপন্থীদের সমর্থনের ওপরে নির্ভরশীল থাকা স্বত্ত্বেও পরমানু চুক্তিসহ একাধিক বিষয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পেরেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় সরকার একের পর এক সংকটে জেরবার হয়ে পড়েছে।
একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ আসছে৷ মূল্যবৃদ্ধি-মুদ্রাস্ফীতি পিছু ছাড়ছে না৷ বাড়ছে বাজেট ঘাটতিও৷ আর্থিক বৃদ্ধি নিম্নমুখী৷ আটকে আছে একাধিক সংস্কারমুখী বিল৷ বিরোধীরা তো আছেই, বিরোধিতায় কম যায় না শরিকরাও৷
শরিকি বিরোধিতার জেরে আটকে গিয়েছে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে পেনশন বিল, বিমা বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমুখী বিল। পেট্রোপণ্যে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েই চলেছে৷ সেইসঙ্গে বাড়ছে রাজকোষ ঘাটতি। এর ফলে ব্যবসায়ী মহলে ভারতে বিনিয়োগ নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরির ইঙ্গিত মিলেছে।
জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রসহ (এনসিটিসি) নানা বিষয়েও কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চরমে উঠেছে। লোকপাল বিল নিয়ে সর্বসম্মতি তৈরি করে উঠতে পারেনি কেন্দ্র। মহিলা সংরক্ষণ বিলও ঠাণ্ডাঘরে। শরিকি আপত্তিতে জমি অধিগ্রহণ বিল এবং খাদ্য সুরক্ষা বিল পেশ করতে পারেনি মনমোহন সরকার।
এতোসব সংকট নিয়েই দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের তিন বছর পূর্ণ হল৷
প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার শরিকদলগুলোকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মনমোহন সিং৷ এতে প্রকাশিত হবে সরকারের গত এক বছরের রিপোর্ট কার্ডও৷ কিন্তু সাফল্য হিসাবে রিপোর্ট কার্ডে কি তুলে ধরা হবে, তা ঠিক করতেই হিমশিম খাচ্ছেন ২৪ আকবর রোডের কর্মকর্তারা৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, গত এক বছরে সাফল্যের চেয়ে ইউপিএ-টুর ব্যর্থতার পাল্লাই বেশি ভারি৷
প্রথম ইউপিএ-র আমলে ইন্দো-মার্কিন পরমাণু চুক্তি এবং ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে সাফল্য হিসাবে তুলে ধরেছিলেন কংগ্রেসের ক্রাইসিস ম্যানেজাররা৷ ভোটবাক্সে তার ডিভিডেন্টও তুলেছিলেন তারা৷
কিন্তু, এ সরকারের আমলে এখনও পর্যন্ত ১০ জনপথ কিংবা ৭ রেসকোর্স রোডের বাসিন্দারা কোনো তুরুপের তাস বের করে উঠতে পারেননি ৷ফলে, তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট কার্ড তৈরি করতে গিয়েও যেমন গভীর সমস্যায় কেন্দ্র, তেমনই ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কথা ভেবেও তাদের উদ্বেগ আরো বাড়ছে৷
বাংলাদেশ সময় : ১৮৫৫ ঘন্টা, মে ২২, ২০১২
আরডি/
সম্পাদনা : অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর