কলকাতা: সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ৬টি পৌরসভার ভোটগ্রহণ। আর রোববার দিনের শুরুতেই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করেই যাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গের নয়া সরকার আসার পর এই ভোট যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শাসকদল তৃণমূলের কাছে জনসমর্থন ধরে রাখা আর বিরোধী বামফ্রন্টের নতুন করে ফিরে আসার স্বপ্ন। একবছরে নয়া সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে না কমেছে তারও আভাস পাওয়া যাবে এই ভোটে।
বিগত বাম আমলে যে অভিযোগ করেছে তৃণমূল, এবার সেই তীর মূলত তৃণমূল কংগ্রেসর দিকে। শাসক দল প্রায় প্রতিটি পৌরসভাতেই বহিরাগতদের দিয়ে ভোট নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেছে বামেরা।
যদিও এই পৌরভোটে এবার জোট ভেঙে মুখোমুখি দুই শরিক তৃণমূল ও কংগ্রেস।
অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তৃণমূলের বহিরাগত বাহিনী। প্রতিটি পৌরসভাতেই এক বা একাধিক বুথে বাম প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও নিগৃহীত হয়েছেন পোলিং এজেন্টরা।
তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগের ভিত্তিতে নলহাটির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীকে পুলিশ গ্রেফতার করায় প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বামেরা।
সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর এটাই প্রথম পৌরভোট। জোট না-হওয়ায় একে অপরের মুখোমুখি তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস। হারানো জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় সিপিএমও। সবমিলিয়ে টানটান উত্তেজনা পৌর নির্বাচনকে ঘিরে। ৬টি পুরসভায় কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সতর্ক প্রশাসন।
পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া ও পাঁশকুড়া, এই দুটি পৌরসভায় ভোটগহণ চলছে। পাঁশকুড়া পৌরসভায় মোট ওয়ার্ড ২৬টি। প্রার্থী রয়েছেন ৯৩ জন। মোট ভোটার ১লাখ ১৭ হাজার ৪৭৭ জন। বুথের সংখ্যা ১৪৮টি।
অন্যদিকে, হলদিয়ায় ১৭টি ওয়ার্ডে ভোটের লড়াই। মোট ৭৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। ভোটার সংখ্যা ৩৪ হাজার ৭৪০। মোট ৪৩টি বুথে ভোট নেওয়া হচ্ছে। এই বোর্ড এতদিন ছিল বামফ্রন্টের দখলে।
পূর্ব মেদিনীপুরের দুটি পৌরসভা মিলিয়ে প্রায় ১,৩০০ পুলিশ কর্মী রয়েছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে।
বর্ধমানের দুর্গাপুর পৌরসভার ভোট ঘিরেও রয়েছে টানটান উত্তেজনা। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে। বিগত বামবোর্ডকে এবার কড়া চ্যালেঞ্জ জানতে প্রস্তুত তৃণমূল।
দুর্গাপুর পৌরসভায় ৪৩টি ওয়ার্ডে ভোট। ১৬৭ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪০ জন। ৪৫৮টি বুথে সকাল সাতটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
নির্বাচনে নিরাপত্তার দিক সুনিশ্চিত করতে মোট ৭টি জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়েছে প্রশাসন। মোতায়েন থাকছে ১হাজার ৪০০ পুলিশকর্মী।
পৌরভোটের যুদ্ধে সকলের নজর রয়েছে বীরভূমের নলহাটি পৌরসভার দিকে। জোট না-হওয়ায় এখানেও মুখোমুখি কংগ্রেস-তৃণমূল। এখানে কংগ্রেসর প্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির পুত্র তথা নলহাটির কংগ্রেস বিধায়ক অভিজিত্ মুখার্জি। নলহাটি পৌরসভা দখল করা কংগ্রেসের কাছে অনেকটাই সম্মানের লড়াই বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
মোট ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে এই পৌরসভায়। প্রার্থী সংখ্যা ৬৭ জন। ২৬ হাজার ৮০ জন ভোটার ঠিক করবেন পৌরবোর্ডের দখল কোন দলের হাতে থাকবে। ভোট নেওয়া হবে ৩০টি বুথে।
কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি কুপার্স ক্যাম্পে এবার মূলত ত্রিমুখী লড়াই। নদিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর সিংয়ের খাসতালুক হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চল।
কুপার্স ক্যাম্প পৌরসভায় মোট ওয়ার্ড ১২টি। ভোটার সংখ্যা ১৩হাজার ৭৪৭ জন। প্রার্থী রয়েছেন ৪৫ জন। ১৬টি বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে। এখানে বাম প্রার্থীরা থাকলেও মূল লড়াই জোট সঙ্গী তৃণমূলের সাথে কংগ্রেসের।
নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর রয়েছে প্রশাসনের। প্রতিটি বুথেই মোতায়েন রাখা হয়েছে পুলিশ বাহিনী। শনিবার সকাল থেকেই ইভিএম নিয়ে কর্মীরা নিজের নিজের কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান।
জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি পৌরসভা জন্মলগ্ন থেকে বামফ্রন্টের দখলে। এবার এখানে পরিবর্তন আনতে মরিয়া তৃণমূল।
ধূপগুড়ি পৌরসভায় লড়াই ১৬টি ওয়ার্ডের দখল ঘিরে। প্রার্থী রয়েছেন ৬২ জন। মোট ভোটারের সংখ্যা ৩০হাজার ৬৯৭। বুথ রয়েছে ৩৭টি।
প্রত্যেকটি বুথের নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর হাতে। উত্তেজনাপ্রবণ বুথগুলির জন্য রয়েছে ২ কোম্পানি বিশেষ বাহিনী।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, জুন০৩, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: বেনু সূত্রধর, নিউজরুম এডিটর; নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর